ইতাআত আর তার সীমারেখা

أعوذ بالله من الشيطان الرجيمبسم الله الرحمن الرحيموَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا

(সুরা ফুরকানঃ আয়াত ২)

আল্লাহতাআলা প্রত্যেক জিনিসকে মেপেছেন। শুধু মেপেছেন তা নয়, ভাল করে মেপেছেন, মাপার মত করে মেপেছেন। দুনিয়াতেও দেখা যায় যে মাপ জিনিসটা বড় গুরুত্বপূর্ণ। ঘি খুব ভাল জিনিস, কিন্তু অতিরিক্ত ঘি হয়ে গেলে খাবার নষ্ট হয়ে যাবে। ভাল জিনিস হলেই যে খুব বাড়ানো যায়, তা কিন্তু নয়। দ্বীনের মধ্যে এই মাপ নষ্ট হয়ে যাবার কারণে আগের ধর্মগুলো নষ্ট হয়েছে।

আল্লাহতাআলা ভাল আমাল দিয়েছেন, কিন্তু আমালগুলোর মধ্যে সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন। নামায সবচেয়ে বড় আমাল, কিন্তু প্রত্যেকদিনই কিছু সময় আছে যে সময় নামায নিষিদ্ধ। এটা এইকারণে যে, মাপের যে মৌলিক নিয়ম আছে, ঐটা সম্বন্ধে বান্দা যেন জ্ঞান রাখে। নামায ভাল, তাই বলে যে যখন তখন পড়বে তা কিন্তু নয়। রোযা রমযানে ফরয, অন্য সময় নফল, কিন্তু কয়েকদিন আবার হারাম। এটা সব আমালে প্রযোজ্য যে, তার একটা মাপ আছে। মাপ নষ্ট হয়ে গেলে দ্বীন নষ্ট।

রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইতাআ্ত দ্বীনের একটা মৌলিক জিনিস। আর সেই ইতাআতের সাথে মহব্বত আছে আর মহব্বতের স্বাভাবিক একটা বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আদাব। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ যাকে ভালবাসে তাকে সম্মান করে। কিন্তু ওখানে সীমা নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। এক হচ্ছে যে সিজদা করতে পারবে না। অন্যান্য ধর্মে এই সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে। ঈসা আঃ কে খ্রিস্টানরা গডই বানিয়ে দিয়েছে। তো রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিজদা করা যাবে না। বরং এর চেয়ে আরও কঠোর। মজলিসে কেউ এলে আমাদের অভ্যাস আছে দাঁড়িয়ে যাই – এটাও শরআন জায়েজ নয়। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রেও জায়েজ নয়। এক মজলিসে গিয়েছিলেন আর তারা দাড়িয়েছিলেন, তো রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করে দিয়েছেন। তো এই সম্মান করবার ব্যাপারেও একটা সীমানা আছে যে এর চেয়ে বেশি না।

তিনজন সাহাবি একবার নিজেদের মধ্যে ঠিক করলেন যে তারা একেকজন একেক আমল করবেন। নামায পড়তে থাকব আর ঘুমাব না, সারারাত নামায পড়বো। রোযা রাখব আর খাব না। আর বিয়েসাদি করব না। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন,

“আমি নামাযও পড়ি আর ঘুমাই। আর রোযাও রাখি আর খাই। আর মেয়েলোককে বিবাহ করি। আর যে আমার সুন্নাত থেকে সরে যায় সে আমাদের মধ্যে নয়”।

তো কড়া নিষেধ করা হয়েছে। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনে বহু ঘটনা আছে। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আর সিদ্ধান্ত হয়ে যাবার পরে কেউ বলেছেন যে এরকম না ঐরকম করুন, তো আল্লাহর রসূল মেনে নিতেন। কথার গুরুত্ব অনেক সহজ হত যদি সিদ্ধান্তের আগে হত। কিন্তু ফায়সালা করে ফেলেছেন আর ফায়সালা করার পরে এসে বলছেন যে এরকম না করে ওরকম করলে ভাল হয়। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেনে নিতেন। বহুবার।

আমাদের কাছে এই অধিকাংশ জিনিসই, যেটা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সাহাবিদের আচরণ ছিল, সেটা বেয়াদবই মনে হবে। ব্যাক্তি বা আচরণের ব্যাপারেও ওরকম। (এক সাহাবি) রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাবারের দাওয়াত করলেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘শুধু আমি, নাকি আয়শাও’? ‘না, শুধু আপনি, একা’। ‘না, তাহলে যাব না’। উনিও আর বললেন না। কথাবার্তা একেবারে সাফ। কোন দুনম্বরি নাই। পরে আবার এসে দাওয়াত দিলেন। আবার রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি একা, নাকি আয়শাও?’ ‘না, আপনি একা’। ‘তাহলে আসব না’। তো গেলেন না। তৃতীয়বার আবার দাওয়াত দিলেন। আবার ঐ একই কথা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন। উনি বললেন, ‘না, শুধু আপনি একা’।

আমাদের মেজাজ হল কাউকে দাওয়াত দিতে গেলাম আর সে যদি বলে যে আয়শাও থাকবে নাকি। আমরা হলে বলতাম, ‘আরে বলেন কি? উনি তো আসবেনই’। [মজমার হাসি]। বের হয়ে পরে মনে করবে ‘আরে কি ফ্যাসাদেই না পড়লাম’। আমাদের মেজাজের মধ্যে নেফাক ঢুকে আছে। অথচ সাহাবাদের সব কথা পরিস্কার, সাফ।

আর আমরা যেটাকে আদব বলি, ঐটা আদবের চেয়ে বেশি তোষামোদ। তোষামোদ হচ্ছে মুনাফিকি জিনিস। আর আদব, ঐটা ঈমানি জিনিস। পার্থক্য হল আদব ভিতর থেকে মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ, কোন নকল নেই আর তোষামোদ হচ্ছে কাউকে পুশ করে অন্য কোন কিছু উসূল করে নেওয়ার নাম। তোষামদে যদি ভাল কিছু বলা হয় তবে সেটাও ভাল নয়। মুনাফিকরা এসে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন,

  إِذَا جَاءكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ

মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।

এখাণে মিথ্যা হল কেমন করে? তারা তো রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূলই বললেন। তাহলে মিথ্যা কেমন করে? মিথ্যা এই অর্থে যে তারা মন থেকে বলেনি, মুনাফিকি। আমরা যেটাকে সাধারণত আদাব বলি, ঐটা আদাব নয়, ঐটা চাপালুসি। উর্দুতে চাপালুসি বলে। দ্বীনের কারণে নয়, বরং তার পদের কারণে, তার অবস্থানের কারণে, তার পজিসনের কারণে,  এক কথায় তেল লাগানো। আর আরবীতে শব্দ হচ্ছে মুদাহিন। সুফিয়ান সওরী রহঃ এর কথা ‘যে সবার কাছে প্রিয়, বেশিরভাগ সম্ভাবনা সে মুদাহিন হবে’। মুদাহিন হল তোষামোদকারী। তো রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের সময় এক জায়গা নির্ধারণ করলেন যে আমরা এখানে থাকব। ওকবা ইবনে মঞ্জুর রাদিয়াল্লাহ আনহু বললেন যে এখানে থাকাতে অসুবিধা হবে, চলুন আমরা ওখানে যাই, পায়ের নীচে মাটি থাকবে, পানি পাওয়া যাবে ইত্যাদি। তো রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহন করলেন। একটা ফায়সালা হয়ে যাবার পরে আবার অন্য কেউ গিয়ে এই যে কথা বলল, উনিও মনে করেননি যে এটা বেয়াদবি আর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে ধমক দেননি যে ফায়সালা হয়ে গেছে, আবার নতুন কথা কেন? বরং উনিও বললেন আর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহন করলেন।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠালেন জুতা মোবারক দিয়ে যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু উনাকে ধাক্কা দিলেন আর বাধা দিলেন। এসে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি পাঠিয়েছেন নাকি। কথা সাফ হল যে উনিই পাঠিয়েছেন, কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বললেন যে এরকম বলবেন না, এতে মানুষ আমাল করা ছেড়ে দিবে। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা মেনে নিলেন।

সফরে খাবার নাই। কায়েস ইবনে সাদ ইবনে ওবাদা রাদিয়াল্লাহ আনহু, উনি সফরের সাথিদের যে উট ছিল, সেই উট বাকিতে কিনে জবাই করে খাওয়াতেন। সাথে দাম নেই, কিন্তু মদীনায় গিয়ে দিয়ে দিবেন। উনার বাপও নামকরা দাতা ছিলেন, ছেলেও সেরকম। তো বাকিতে কিনে খাওয়াবেন। রওনা হয়েছেন উটকে জবাই করার জন্য, উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু দেখলেন আর বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? ‘উট জবাই করতে’। কেন? ‘লোকের খাবার নাই, তাদেরকে উট জবাই করে খাওয়াব’। ‘না, তা হবে না’। ‘রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইজাজত নিয়েছি’। ‘না, চল’।

রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি নিয়ে এসে জবাই করতে যাচ্ছেন আর উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু ধরেছেন যে আবার চল। গিয়ে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গিয়ে বললেন, ‘উট দিবেন না, উট খেয়ে ফেললে আমরা যাব কেমন করে’। অথচ উনি অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন সেটা উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু জানেন। তো সাহাবাদের মেজাজের মধ্যে একটা জিনিস ছিল যে দ্বীনি বিষয়ে একটা কথা বলার পরেও নিজের মতামতকে পেশ করতেন।

এক সাহাবী নামাযে লোকমা দিয়েছেন। একথা মনে করেননি যে উনি আল্লাহর রাসূল, সেহেতু উনি ভুল করলেও ঠিক। তা নয়। উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহ আনহু লোকমা দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল চার রাকাআত নামায দুই রাকাআত পড়ে শেষ করে দিয়েছেন। আমরা বয়ানের মধ্যে বলি যে নামাযের মধ্যে কোন ধ্যান নাই, একজন দোকানদার, সে বলল যে তিন রাকাআত হয়েছে। কেন, তিন রাকাআত হয়েছে কেন? বলল, ‘আমার চার দোকানের হিসাব চার রাকাআতে শেষ করি, আর তিন দোকানের হিসাব শেষ হয়েছে, চার দোকান হয়নি। নামাযের মধ্যে রাকাআতের ভুল করা চুড়ান্ত গাফলতি। চুড়ান্ত গাফলতি। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকাআতের মধ্যে ভুল করলেন। শুধু ভুল নয়, চার রাকাআত দুই রাকাআতে শেষ করে দিলেন। তিন রাকাআত হলে একটা কথা ছিল। নামাযের শেষে আব্দুল্লাহ ইবনে… রাদিয়াল্লাহ আনহু বললেন, ‘ইয়া রসূলুল্লাহ, নামাযের নিয়ম বদলে গেল নাকি আপনি ভুল করলেন’। নিয়ম তো বদলায়নি। তাহলে কি ভুল? আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহ আনহু উনার সমর্থন করলেন আর বললেন যে দুই রাকাআতে নামায শেষ করে দিয়েছেন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেনে নিলেন।

কিরাতে ভুল, নামাযে ভুল – আল্লাহর নবীর এই ভুলগুলো হয় কেমন করে?

এই ভুলের ভিতর দিয়েও বড় একটা শিক্ষা আছে। সংশোধন কেমন করে করতে হয়, আর সংশোধনের প্রয়োজন সব জায়গায় আছে। আল্লাহর রাসূলের যদি সংশোধনের দরকার থাকে তাহলে বাদ থাকল কে? আর যদি সংশোধনের মেজাজের মধ্যে উম্মত না থাকে, তাহলে ঐ উম্মত অশুদ্ধ পথে ধ্বংস হবে।

মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহ আনহু, উনার খেলাফতের জমানায় জুমআ পড়ে ঘোষনা করলেন, ‘গণীমতের মালও আমার, জমিও আমার। গনীমত, যেটা আওয়ামের সম্পদ, আর উনি দাবি করছেন যে এইটা আমার। অথচ এটা শুদ্ধ না। কারণ এটা আওয়ামের। কেউ কিছু বলল না। দ্বিতীয় জুমআয় আবার এই এলান করলেন। কেউ কিছু বলল না। তৃতীয় জুমআয় আবার এলান করলেন, একজন আপত্তি করল। বলল এটা আপনার নয়, এটা আওয়ামের। উনাকে ডাকা হল। উপস্থিত যারা ছিল তারা ভেবেছে যে ও জিন্দা আর আসবে না। মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহ আনহু তাকে ডেকে নিয়ে খুব শোকর আদায় করলেন, খুব কাঁদলেন আর বললেন তুমি আমাকে রক্ষা করলে। কেন? উনি বললেন, ‘রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে (হাদিসের হুবহু কথাগুলো ঠিক আমার ভালমত মনে নেই), একটা ভুল কথা বলে আমীর আর তার কেউ সংশোধন করে না, তাহলে ঐ আমীর ধ্বংস। এক জুমআতে আমি বললাম, কেউ সংশোধন করল না। আমার তো ভয় হল যাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে ধ্বংস হোক, আমি তাদের মধ্যে পড়লাম কিনা। দ্বিতীয় জুমআতে যখন আবার এলান করলাম, আবার কেউ আমাকে আপত্তি করল না, তখন আমি নিশ্চিতই হয়ে গেলাম। তৃতীয় জুমআতে যখন এলান করলাম, তখন তুমিই আপত্তি করলে। আল্লাহর ফজলে আমি আশা করি যে আমি এখনো জাহান্নামির মধ্যে হইনি। উনি জেনেশুনে এলান করছেন। দেখতে চাচ্ছিলেন ঐ হাদীস অনুযায়ী যে কেউ আপত্তি করে কিনা। আর যদি আপত্তি না করে, তাহলে হাদিস অনুযায়ী সে জাহান্নামি। জাহান্নামি মেজাজ হল এই তোষামোদ করবে, সত্য হোক বা মিথ্যা – নিজের জানের ভয়ে হোক বা অন্য কোন ভয়ে সে সেই কথা বলবে না। আর দ্বীনের মেজাজ হল এই যে আল্লাহর রাসূলেইর যদি ভুল ধরে তাহলে আর বাকি থাকল কে।

উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন বানিয়েছেন, তারমধ্যে একাধিকবার উনি সংশোধন করেছেন। বিবাহের যে দেনমোহর থাকে – উনার সময় মানুষ বেশি বেশি দেনমোহর দিতে আরম্ভ করল। যেটা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জমানায় ছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে প্রতিযোগীতা বাড়ল। কিছু বড়লোকই দেখানো। উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু নির্ধারন করে দিলেন যে দেনমোহর এত পরিমানের বেশি হবে না। একটা পরিমাণ নির্ধারণ করে দিলেন। মদীনার এক মহিলা বলল, ‘হে উমর, তোমার কথা মানব নাকি আল্লাহর কথা মানব, আল্লাহতাআলাই বলেছেন যে কিনতার পরিমাণ যদি দিয়ে থাক, তাও ফেরত নিও না। তার মানে কিনতার পরিমাণে দেওয়া যায়। আর তুমি বলছ, দেওয়া যাবে না। উমর রাদিয়াল্লাহ আনহু শোকর আদায় করলেন আর বললেন, ‘তুমি আমাকে বাঁচিয়েছ’। আর এই কথাও বললেন, ‘দেখা যায় যে মদীনার মহিলারাও উমরের চেয়ে বেশি ইলম রাখে’।

এক হল যে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই মেজাজ থাকা দরকার যে ভুল হতে পারে আর তার সংশোধন করা দরকার। অপরদিকে প্রধান যারা আছেন, তাদের এই মেজাজ থাকা দরকার যে ‘আমি ভুলের উর্ধ্বে না, আমিও জবাবদিহিতার মুখাপেক্ষী’। মাওলানা ইলিয়াস রহঃ খুব তাগিদ এনেছেন এই কথাটায় ‘আমি তোমাদের নিগ্রানির মুখাপেক্ষী’। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহ আনহুও সাহাবাদের এই কথা খুব বলতেন, ‘আমি তোমাদের নজরদারির মুখাপেক্ষী। নজর রাখবে যে কোথায় কোন ভুল ত্রুটি হচ্ছে, সংশোধন করে দিবে’। উনি নিজে আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহ আনহু এর খুব ভুল ধরতেন। আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহ আনহু এর ভুল যদি উনিই ধরেন, তাহলে উনার ভুল ধরবে কে? আওয়ামকে বারবার প্রমাণ করেছেন যে তোমরা নজর রাখবে। শয়তান মানুষকে তার বিভিন্ন ফাঁদের মধ্যে ফেলে আর এইটাও একটা ফাঁদ যে নেতৃত্বাস্থানীয় যারা আছে, এদেরকে অধিক শ্রদ্ধার উপরে উঠায়। নাসারারা ঈসা আলাইহিস সালামকে এতই সম্মান, শ্রদ্ধা করতে আরম্ভ করলো যে করতে করতে একেবারে আল্লাহর পুত্রই বানিয়ে দিল। ঐ যে সীমা লংঘন করল। পরবর্তীতে দুনিয়াতে বিশেষ করে আমাদের দেশে বহুত বড় মুসীবত হচ্ছে বিদআত। আর বিদআতের মূল হচ্ছে ভন্ড পীরকে মহব্বত। তার মধ্যে কিছু গুন থাকে। কিন্তু এটাকে এমন সীমার উর্ধ্বে নিয়ে যায় যে এর পরে ওর ব্যাপারে এত বেশি আস্থা, এত বেশি শ্রদ্ধা তৈরি হয় যে, উনার ভুল ধরা যাবে না।

ধরা যাক আমার পীর সাহেব। আমার অমুক পীর সাহেবের কাছে মহিলাও আসে, পুরুষও আসে। তো মহিলাদের প্রথম প্রথম মাথায় হাত দেয়। তারপর আস্তে আস্তে পিঠেও হাত দেয়। মুরিদ দেখেও। কখনো কখনো মুরিদের স্ত্রী, কখনো তার নিজের মেয়েও থাকে। কিন্তু আশেপাশে অন্যরা দোয়া পড়তে থাকে আর পীরও ভাবে দেখি কতদুর যাওয়া যায়। সুযোগসন্ধানে সে নিজেও থাকে। আর শয়তান তাকে বুঝায় যে ‘হুযুর’ এইসব ব্যাপারে কত পাক, তুমি ধারনাও করতে পারবে না। নাউযুবিল্লাহ। নাউযুবিল্লাহ। তার দিল পাক, তোমার দিল নাপাক। সেজন্য তুমি খারাপ ধারনা করছ। নাউযুবিল্লাহ। নাউযুবিল্লাহ। তুমি তওবা কর। এভাবে ধীরে ধীরে হয়।

আমি শুনেছি, নিজে কাউকে ওরকম দেখিনি। রাজশাহী অঞ্চলে নাকি এখনো ওরকম পীর আছে যাদের বিশেষ বিশেষ কিছু মুরিদ তার বউকে, তার মেয়েকে পীরের কাছে রাতে পাঠায়। এটা হল কেমন করে? শয়তান এই সম্মান, শ্রদ্ধাকে এত উপরে উঠিয়েছে যে পীরদের ক্যাপিটালই ওটা।

এই প্রসংগে একটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার একজন এক ঘটনা বলছিল যে মুরিদ তার পীরের কাছে গিয়ে বলল যে আমি স্বপ্ন দেখলাম দুইটা পাত্র। এক পাত্রে মধু আর আরেক পাত্রে ময়লা। আমার হাত ময়লা পাত্রে আর আপনার হাত মধুর পাত্রে। পীর বলল যে তোমার দিল নাপাক, তুমি যেহেতু দুনিয়ার মধ্যে, তাই ময়লা পাত্রে হাত। মুরিদ বলল আমি এখনো শেষ করিনি। স্বপ্নে আরো দেখলাম আপনার মধুমাখা হাত আমি চেটে খাচ্ছি আর আমার ময়লা মাখা হাত আপনি চেটে খাচ্ছেন। [মজমার হাসি]। পীর তখন আর কি বলবে। বলল যে শয়তান তোমাকে ঐ স্বপ্ন দেখিয়েছে।

যে মুরিদ, ও তো দেখছে যে পীর জায়গা নিচ্ছে, হারাম খাচ্ছে, ধোকা দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, ও নিজেই তো টাকা দিচ্ছে। ওর তো বুঝা উচিত যে পীর যদি হয় আল্লাহওয়ালা, তাহলে তো মালের মহব্বত থাকার কথা না। কিন্তু শয়তান ওকে বুঝিয়েছে যে আমার পীরের ব্যাপার আলাদা। ঐটার উপরেই দুনিয়ার সব বিদআতি। এই একটা কথাতেই সব নষ্ট। জানে যে আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করা যাবে না, কিন্তু পীরকে সিজদা করে। একেবারে সিজদাই করে। ওকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে সিজদা করা কি ঠিক। ও বলবে না। তাহলে তুমি যে করলে। তখন বলবে ঐটা আলাদা।

সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আদাব সবকিছুর একটা মাপ আছে। মাপের বাইরে চলে যাবে, ঐটা আর দ্বীন থাকবে না। অন্যান্য বেদ্বীনিরা এইটাকেই বাড়াতে চায় তাদের নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য। এরা চায় তাদের টাকা-পয়সা, সম্পদ ইত্যাদির ব্যাপারে যেন কেউ প্রশ্ন করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। মুরিদের নামে মহিলাদের সাথে যা ইচ্ছা তারা যেন করতে পারে আর তাদের এই দোষ যেন কেউ না ধরে। এইজন্য বলা হয় যে দ্বীল থেকে শ্রদ্ধা কর, তোমার চোখের দেখা ভুল। এই কথাগুলো যে বলছি, এগুলো বানানো কথা নয়। বাস্তবে এইসব কথা দিয়েই চালানো হয়। বছরের পর বছর চালানো হয়। আর কোন সীমা নাই। মহিলাদেরকে নিয়ে কতদুর পর্যন্ত যায়, ওটার কোন সীমা নাই। আরো না জানি কত কি আছে। অথচ এরা সব মেনে নেয়। সমর্থন করে। অন্য কায়দায় উদ্বুদ্ধ করে আর বলে যে তোমার বউকে পাঠাও। বউকে পাঠাতে বলে আর এও বলে যে তুমি কি খারাপ ধারনা করছ নাকি। তোমার দিল নাপাক, তাই তুমি খারাপ ধারনা করছ। বলে, সরাসরি এই ভাষায় হয়ত বলে না, কিন্তু ঘুরেফিরে এগুলোই বলে।

আল্লাহতাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন, ওটা বড়ই সুন্দর। থানভী রহঃ মসজিদের মধ্যে দশ টাকার নোট দিয়ে দুইটা পাঁচ টাকার নোট নিলেন। আমরা জানি মসজিদের ভিতর বিকিকিনি জায়েজ নয়। আর নোট ভাঙ্গানো বিকিকিনির মাসআলার মধ্যেই পড়ে। কারণ একটা দশ টাকার নোট দিয়ে দুইটা পাঁচ টাকার নোট কিনা হল। (থানভী রহঃ এর) মুরিদ উপস্থিত ছিল। মুরিদ বলে দিল যে বিকিকিনির মধ্যে মাসআলা। আমার দেশের মুরিদ হলে বলত ‘বহুত সওয়াব হবে’, বিকিকিনি ঐটাতো আলাদা জিনিস। [মজমার হাসি]। অথচ এই ব্যাপারে পীর-মুরিদান শুদ্ধ হওয়া উচিত। আমাদের দেশের মেজাজ ভিন্ন। শুদ্ধ-অশুদ্ধ পার্থক্যই করতে পারে না, গোটা দেশের উল্লেখযোগ্য মানুষ বিদআতে লিপ্ত।

এক মুরিদ থানভী রহঃ এর কাছে গিয়েছেন। উনি তখন শুয়ে ছিলেন। তো গিয়ে পা টিপতে আরম্ভ করেছেন। উনি বললেন পা টিপার দরকার নাই। তবুও টিপছে। উনি নিষেধ করেই যাচ্ছেন। আর উনি পা টিপছেন আর বলছেন ‘আমার মন চাই’। আবার পা টিপছেন। পায়ের কাছেই মুরিদ ছিল, থানভী রহঃ পা তুলে জোরসে দিয়েছেন এক লাথি। মুরিদ আশ্চর্য হয়ে গেছে। পা টিপা আপাতত বন্ধ হয়েছে। মুরিদকে কাছে ডাকলেন আর বললেন, ‘আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনা যে কেন মারলাম?’। মুরিদ বলল, ‘কেন?’। উনি বললেন, ‘আমার মন চাই’ [মজমার হাসি]। তো তরবিয়ত করেছেন আর যেভাবে করা দরকার সেইভাবে।

মাওলানা ইলিয়াস রহঃ ট্রেনে যাচ্ছিলেন। থার্ড ক্লাসের টিকিট কিনে ভিড়ের কারণে বাধ্য হয়ে উঠেছেন সেকেন্ড ক্লাসে। টিটি এসেছে আর এসে বকাবকি করেছে। উনিও পাল্টা জবাব দিয়েছেন আর বললেন যে টিকিটের অতিরিক্ত ভাড়া তো দেওয়ায় হচ্ছে। খাদিম ছিলেন মাওলানা ইনামুল হাসান রহঃ, ছোট বাচ্চা। উনি হাদিস শুনিয়ে দিলেন।

‘ইন্না লিসাহিবিল হাক্কি মাকালা’ ’ হক্ব যার আছে, তার কথা বলার অধিকার আছে’।

অর্থাৎ টিটির কথা বলার অধিকার আছে, আপনার নাই। অত ব্যাখ্যা করেননি, শুধু এই কথা বলে তাই বুঝিয়েছেন। মাওলানা ইলিয়াস রহঃ বুঝতে পারলেন আর পরের স্টেশনে গিয়ে টিটির কাছে মাফ চেয়ে নিলেন। কোথায় মাওলানা ইলিয়াস রহঃ আর কোথায় মাওলানা ইনামুল হাসান রহঃ। বয়সের কত পার্থক্য। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন যে এই জায়গায় মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর কাজ অশুদ্ধ, তো ছোট হওয়া সত্ত্বেও সাথে সাথে সংশোধন করে দিয়েছেন। এমন না যে এটা বেয়াদবি।

আমাদের সমঝ এত নিম্নমানের। রাজশাহীর একজন ডাক্তার, ও আমার পরিচিত, কাকরাইলে এসে বসেছেন। তো উনি, আব্দুল মুকিত সাব, ডাক্তার ইবরাহীম সাব ছিলেন। অনেক আগের কথা। কি প্রসঙ্গে যেন কথা হচ্ছে। তো আব্দুল মুকিত সাব রহঃ বললেন যে, ‘মধুতে ডায়াবেটিক্স রোগীর ক্ষতি হয় না’। ডাক্তার ইবরাহীম প্রচলিত চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী বললেন যে ‘ডায়াবেটিক্স রোগীর মধুতে ক্ষতি হয়’। আব্দুল মুকিত সাব রহঃ বললেন, ‘আপনি ইডিয়টের মত কথা বলছেন’। রাজশাহীর যে ডাক্তার, ডাক্তার হওয়ার কারণে ডাক্তার ইবরাহীম সাহেবের পরিচিতি, সমাজে তার মান-সম্মান ইত্যাদির ব্যাপারে ভাল করে জানেন। কথা ওখানেই শেষ হল।

এর বেশ কিছুদিন পরে টংগীতে ছাত্রদের ইজতেমা ছিল। আগে ছাত্রদের ইজতেমা হত। তো সেই ছাত্র ইজতেমার সময় একজন বিশিষ্ট মেহমান আমার পাশেই ছিলেন। তো আমি সেই রাজশাহীর ডাক্তার, তাকে পুরাতন সাথী হিসেবে কিছু কথা, কথা মানে দ্বীনি কথা বলার জন্য বললাম। তো উনি কথা প্রসংগে বললেন যে ডাক্তার ইবরাহীম সাব আব্দুল মুকিত সাবের রুমে এসেছিলেন আর বললেন যে ডায়াবেটিক্সের রোগীদের ক্ষতি হয় মধু খেলে, তো আব্দুল মুকিত সাব বলেছিলেন যে ‘আপনি ইডিয়টের মত কথা বলছেন’, আল্লাহতাআলা তরতীবের জিম্মাদার হিসেবে, পুরানো জিম্মাদার হিসেবে আব্দুল মুকিত সাবকে কত মর্যাদা দিয়েছেন যে ডাক্তার ইবরাহীম সাবকে ইডিয়ট বলতে পারে। আমি এই কথা শুনে থ হয়ে গেলাম।

একজন মানুষ কত আহাম্মক হতে পারে যে চিন্তাসীমার বাইরে। আব্দুল মুকিত সাবকে আমি দোষ দিই না। এইজন্য দোষ দিইনা যেহেতু ভুল মানুষের হতেই পারে। বেফাস কথা ভুল করে বের হয়ে যেতেই পারে। আদবওয়ালা মানুষও চুড়ান্ত বেয়াদবি করে ফেলতে পারে। একজন সবার কাছে সম্মানি ব্যাক্তি এসেছেন, উনার কাছেই এসেছেন, মেহমান হিসেবে মাথায় তুলে রাখা আখলাকের দাবি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ ‘তোমার কাছে যখন কোন সম্মানিত ব্যাক্তি আসে, তখন তাকে সম্মান কর’।

এইসব নিয়ম ভংগ করেছেন যখন এই কথা বলেছেন যে ‘আপনি ইডিয়টের মত কথা বলছেন’। আবার বলছি যে আব্দুল মুকিত সাবের দোষ দিই না। ভুল মানুষের হতেই পারে। দোষ হল ঐ আহাম্মকের যে এইটাকে গুন মনে করছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম যে মানুষ কত আহাম্মক হতে পারে। যেখানে একজন মেহমান, সম্মানিত ব্যাক্তি এসেছেন – তার সামনে অভদ্র, নিম্নমানের ভাষা ব্যাবহার করে তাকে অপমান করছে আর সে বলছে, ‘মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, আল্লাহতাআলা উনাকে কত মর্তবা দিয়েছেন’।

এটা এজন্য যে গোটা পরিবেশ এমন – গলদের প্রতি শয়তান আমাদের ভাল লাগার জন্য এমন সব কথা শিখিয়েছে যে আমার মুরব্বী যা বলেন, আমার শাইখ যা করেন, আমার পীর যা করেন ঐটাই ঠিক। তাতে সে চোরই হোক, ডাকাতী হোক, বদ আখলাকি হোক, যেটাই হোক। আর শয়তান এইভাবেই চালায়।

এজন্য ভাই, মেহেরবানী করে আল্লাহতাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন, দ্বীনের মধ্যে বড় জরুরী হল, যেটা দুনিয়াবি কাজের মধ্যেও জরুরী যে সীমানা বুঝি। দুনিয়ার কাজেও সীমানা যদি না খুজে, তাহলে দুনিয়ার কাজও করতে পারবে না। রান্নাতে ডিম ভাজল আর ওটাতে খুব ঝাল। তো নষ্ট হয়ে গেল। প্রত্যেক জিনিসের তার সীমা আছে। দ্বীনের মধ্যে বড় একটা অংশ হচ্ছে যে তার মহব্বতের, আদবের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা। একটা ছোট বাচ্চাকে যদি অধিক আদর করা হয়, নষ্ট হয়ে যাবে। আবার একেবারেই না করা হয়, শুধু শাসনই করতে থাকি, তাও নষ্ট হয়ে যাবে। একটা মাপ আছে। শাসনও করতে হবে, স্নেহও করতে হবে। বড়দের ক্ষেত্রেও তাই। যে বড় তার সাথে ভালবাসা, আদব এগুলোও রক্ষা করতে হবে, তবে তার সীমানার মধ্যে।

পীরকে সংশোধন মুরীদরা করবে। পীরের তো আর পীর নাই। বয়স হয়ে গেছে, ইন্তেকাল করেছেন। একজন মুরীদ পীরের কথা শুনবে। কিন্তু পীর স্বাধীন নাকি? মোটেই না। পীরকে মুরিদদের সাথে পরামর্শ করে চলতে হয়। মাওলানা ইনামুল হাসান রহঃ কে দেখেছি যে নিজের চালচলন কোন ব্যাপারেই একেবারেই স্বাধীন ছিলেন না। পুরো পাবন্দ ছিলেন। কার পাবন্দ ছিলেন? সাথী যারা আছেন তাদের পাবন্দ ছিলেন। তারা যেভাবে বলে। তো সব জিনিসেরই নিয়ম আছে।

ইতাআত বা মুরব্বীদেরকে মানা, তাদেরকে সম্মান, শ্রদ্ধা করা – এগুলো যেন শরীয়তসম্মত হয়। নমশুদ্ররা যেরকম ব্রাহ্মনদেরকে মানে, ওরকম নয়। মানলেই যদি জান্নাত পাওয়া যায়, তাহলে নমশুদ্ররা আগে জান্নাত পেত। ওরা যেরকম ব্রাহ্মনদেরকে মানে, দুনিয়ারে ইতিহাসে এরকম মানা পাওয়া যায় না। কিন্তু ঐ মানা দিয়ে জাহান্নামেই যাবে।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জামাআত পাঠালেন। সেই জামাআতের আমীর এক কুন্ডলি আগুন করে মামুরদের বললেন যে আগুনে ঝাঁপ দাও। তারা কেউ মানল না। ফিরে এসে কারগুজারী শুনালেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ঐ আগুনে যদি তোমরা ঝাঁপ দিতে, তাহলে ওখান থেকে আর কোন দিন বের হতে না’। অর্থাৎ এই আগুন তাদের জাহান্নামের আগুনই হত। উনাদেরকে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে থেকেই সাবধান করে দেননি। এরকম যদি হত যে জামাআত পাঠানোর আগে মামুরদের আগেই বলে দিয়েছেন যে এই আমীর কিন্তু একটু পাগলা। কিন্তু কোন ধরনের সাবধান করেননি। আমীর আমীরই। আমীরের ব্যাপারে, মানার ব্যাপারে, ইতাআতের ব্যাপারে যত কথা আছে সব এই আমীরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু ঐ মামুরদের আমীরকে মানার ব্যাপারে সীমানা কি – এইটা দেখানোর জন্য আল্লাহতাআলা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে এটা করালেন। আমরা যদি সাধারণ মানুষ হতাম, তাহলে হয়ত বুঝতাম যে আমীর নির্বাচনই ভুল হয়েছে। বলতাম এই আমীরকে আমীর বানানোই ঠিক হয়নি। কিন্তু এই নির্বাচন রসূলই করেছেন। আল্লাহতাআলা এই ঘটনার মাধ্যমে এই উম্মতকে জানাতে চান যে যেরকম মানা শিখতে হবে, তেমনি না মানাও শিখতে হবে।

মাওলানা সাঈদ আহমদ খান সাব এই মিছাল দিতেন আর তারপর এই কথা বলতেন যে মাশাআল্লাহ তোমাদের দেশের লোক বহুত মানলেওয়ালা। বহুত মানলেওয়ালা বলার সময় লম্বা টান দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলতেন। আর মিছাল দিয়েছিলেন শীতের কালে এক আমীর মামুরকে বলেছিলেন যে পুকুরের মধ্যে ডুবে থাক, তো ঠিকই সারারাত্রি ডুবে ছিলেন। এই কথা বলে বলতেন, বহুত মানলেওয়ালা। অথচ উচিত ছিল অমান্য করা। অমান্য করারও হুকুম আছে। তো ঐটা দেখানোর জন্য আল্লাহতাআলা রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটালেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তৌফিক নসীব করুন। দ্বীন যেন দ্বীন হিসেবে সীমানা বুঝে মানতে পারি। নামায যত বড়ই আমলই হোক না কেন, কিছু কিছু সময় আছে যখন নামায পড়া যাবে না। কিছু কিছু দিন আছে রোযা রাখা যাবে না। তো আমলের ব্যাপারেও ওরকম, মানার ব্যাপারেও ওরকম। এজন্য মেহনত করে নিজেকে হুশিয়ার বানায়।

سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهَ

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْك

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُون وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينََ

….

মাজালিসে মুশফিক আহমাদ দাঃ বাঃ – স্থানঃ বাসাবো স্কুল মসজিদ ৩-৩-১৫, বাদ ইশা মোজাকারা

pdf ফাইল পেতে ক্লিক করুন

http://www.mediafire.com/?7l7lqv3n8qd8m

অডিও লিংক

https://www.dropbox.com/s/k5xit7ryyh93wiz/03-03-15%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%20%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%20VVI.amr?dl=0