প্রসংগ বর্তমান তাবলীগ জামাআতঃ পরিশুদ্ধ চেতনা

দ্বীনের লক্ষ্যই এটা যে, একজন মানুষের নিজ চেতনা এত উন্নত হয়ে যায়, স্বতস্ফুর্তভাবে যে কাজ করবে (স্বতস্ফুর্তভাবে), কোন দলিল প্রমাণ দেখে নয়, কোন যুক্তি দিয়ে নয়, স্বতস্ফুর্তভাবে যে কাজ করবে, ঐটাই যেন আল্লাহর পছন্দের সাথে মিলে যায়। তার অন্তর আল্লাহর নিয়মের সাথে মিলে যায়।

 

صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ 

আমরা আল্লাহর রং গ্রহন করেছি। আল্লাহর রং আর আল্লাহর চেয়ে ভাল কে রাঙ্গায়? আমরা তারই ইবাদত করি। (সুরা বাকারাঃ ১৩৮)

তো আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে নিজের অন্তরের রং আল্লাহর সাথে মিলেয়ে নেওয়া। তো যে কথা সে তার নিজ অন্তর থেকে বলবে ঐটা যেন, এভাবে বলা যেতে পারে যেরকম আমরা বলে থাকি যেন  (প্রচলিত লোকে যেমন বলে) by chance, আল্লাহর কথার সাথে মিলে যায়, আর এরকম যেন সবসময় হয়। ওর মন যে কথা বলে, প্রত্যেকবারই by chance, ঐটা আল্লাহর কথার সাথে মিলে যায়। এই দুটোর সাথে এত বেশী সামঞ্জস্য-এটা অর্জন করা। সাহাবারা রাঃ আল্লাহর ফজলে এটা এত বেশী অর্জন করেছিলেন যে, যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালের ফুকাহারা সাহাবাদের ব্যাক্তিগত আচরণ, ব্যাক্তিগত উক্তি যেটা বুঝে শুনে, সচেতনভাবে, বলে-কয়ে করেননি, (কিন্তু) করেছেন-এই আচরণগুলো, তাঁদের এই কথাগুলো, তাঁদের এই উক্তিগুলো, এই সবগুলোই ফিক্বাহর বুনিয়াদ হিসেবে ফুক্বাহারা গ্রহণ করেন। (যেমন) উনি এই সময় এটা করেছেন, তো এটাই নিয়ম। হায়াতুস সাহাবার মধ্যে সাহাবীদের রসিকতার উপর বাব আছে, আজীব আজীব ঘটনাও আছে। যেমন আমাদের কিছু ক্লান্তি দুর হবে-এজন্য কিছু রসিকতা করি। কিন্তু সেটা সাহাবীদের জীবনী থেকে আর ঐটাও দ্বীন। এক মজলিস ছিল, একজন অন্ধ ছিলেন। তো সে জমানায় তো আর বাথরুম ছিল না। একটু আড়ালে গিয়ে পেশাব করতে হত। আরেকজনকে গিয়ে বলেছেন যে আমাকে একটু নিয়ে যাও, পেশাব করব। এক মজলিস ছিল। উনি নিয়ে গেছেন এমন এক উঁচু জায়গায় যেখান থেকে পেশাব করলে ঐ মজলিসের উপর গিয়ে পড়ে। তো তাই। বেচারা তো অন্ধ মানুষ, তখন করেছে, তারপরে টের পেয়েছে, খুব রাগ করেছে তার উপর। পরে আবার উনি এসেছেন, কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে, (বললেন) ‘যে তোমাকে নিয়ে গিয়েছিল, তাকে দেখিয়ে দেব? হ্যা, এখানেই আছে’। (তো) আরেকজনের সামনে নিয়ে (বললেন) ‘এই’। (অন্ধ সাহাবী) ওর মাথায় বসিয়েছেন। প্রথমে উনাকে দিয়ে পেশাব করালেন মজলিসের উপর, আরেকবার আরেকজনের মাথার উপর লাঠি দিয়ে মারালেন। এগুলো হায়াতুস সাহাবাতে আছে, সাহাবীদের ঠাট্টা-রসিকতার উপর বাব।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাঃ এর সাথে ঝগড়া করেছেন, সালিশ করেছেন, এগুলো হাদীসের কিতাবের মধ্যে পড়ানো হয়। প্রশ্ন হলঃ ঠাট্টা, রসিকতা, ঝগড়া এটা একটা শিখবার জিনিস নাকি? তাহলে কেন পড়ানো হয়? আর হাদীসে আছেই বা কেন? তাদের যে এই অন্তর, মানুষের অন্তরের প্রকাশ বিভিন্নভাবে হয়। একজন মানুষকে যে চেনা যায় শুধু তার সচেতন সতর্ক কথা দিয়ে চিনা যায় না, বরং তার বিভিন্ন অবস্থার ভিতর দিয়ে তাকে চেনা যায়। আর সাহাবারা রাঃ এত শুদ্ধ, দুনিয়ার মানুষের জন্য এত উন্নত মানের দৃষ্টান্ত-এটা আল্লাহতাআলার বলে দেওয়া সার্টিফিকেট।

 

آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ 

“আমিনু কামা আমানান্নাস” 

“মানুষের মত ঈমান আন”

ওলামারা এইব্যাপারে একমত, এখানে মানুষের মত বলতে সাহাবাদেরকে বুঝায়। যে এরাই হল আসল মানুষ। তাদেরকে চিনা, বিভিন্ন অবস্থায় চেনা যায়। গল্প আছে এটা বোধ হয় আমাদের দেশেরই প্রাচীন গ্রামীন গল্প বা কিছু একটা। একজন বিদেশী লোক এসেছে, মহা পন্ডিত। তার এত জ্ঞান, কিন্তু অপরিচিত। তো রাজা মন্ত্রীকে বলল, “এই লোকটার আসল কি (আর) তার পরিচয় বের কর”। তো মন্ত্রীর সাথে ও হাটছে। হাটতে হাটতে মন্ত্রীর পায়ের নীচের দিক ছিল শক্ত। তো যে আগন্তুক তার পায়ে উপর জোরে আঘাত করেছে। হাবভাবে এমন যেন ভুল করে করেছে দিয়েছে। তো ব্যাথা যখন পেয়েছে তখন গালি দিয়েছে, আর গালি যখন দিয়েছে তখন মাতৃভাষা প্রকাশ পেয়েছে।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ঐ ব্যাক্তি যে তার পরিবারের কাছে ভাল”। পরিবারের মধ্যে ভাল- এটার একটা বিশেষ অর্থ আছে। সেই অর্থ হল বাইরে একজন মানুষের আচরণ, সে তার সচেতন নিয়ন্ত্রনে রাখে। আমল পরিচয় অনেকসময় বের হয় না। কিন্তু তার পরিবারের ভিতর, নিজের স্ত্রীর কাছে, নিজের অধীনস্থ লোকের কাছে, নিজের সন্তানের কাছে, ওখানে তার স্বতস্ফুর্ত পরিচয় পাওয়া যায়। বাইরে তো ও খুব ভদ্র মানুষ। বাড়ির ভিতর বুঝা যাবে ও কতটুকু ভদ্র।

তো সাহাবাদের রাঃ হাসি, রসিকতা, রাগ- এসবগুলো আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। সাহাবাদের মত কেউ যদি রাগ করতে পারে, সেই রাগও হয়ত তাকে নাজাত দিবে। যে রসিকতা করতে পারে, সে রসিকতাও হয়তো তার নাজাতের কারণ হবে। কারণ এই সবকিছুই তাদের পরিশুদ্ধ অন্তরের পরিচয়। (আর) লক্ষ্য ঐটা অর্জন করা।

দ্বীন কিছু আনুষ্ঠানিক আমলের নাম নয়, এই আমলগুলো হল উপলক্ষ্য। শরীয়তের মধ্যে সবচেয়ে বড় হুকুম যেটা নামায, নামাযকেও আল্লাহতাআলা এক জায়গায় উপলক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। “আক্বিমিস সালাতাল লি যিকরি- নামায কায়েম কর, আমার স্মরণের জন্য”। যিকিরের জন্য। তোমার নামায হল উপলক্ষ্য, লক্ষ্য হল যিকির-আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েম করার জন্য। তো নামায, সবচেয়ে বড় হুকুম যেটা, ঐটাও যদি উপলক্ষ্য হয়, তো বাকি হুকুমগুলো তো উপলক্ষ্যই হবে। প্রশ্ন হল তাহলে লক্ষ্য কি?

লক্ষ্য সম্ভবত এটাই যে, তার অন্তর, তার ক্বলব যেন আল্লাহর কাছে মক্ববুল হয়ে যায়। ইয়াওমা লা ইয়ানফাউ…সালিম। এমন এক দিন আমাদের সামনে আসছে, তোমাদের সন্তান, সম্পদ কিছুই তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না- ক্বলবে সালিম-শুদ্ধ দ্বীল। কাম্য তো শুদ্ধ দ্বীল, কিন্তু শুদ্ধ দ্বীলকে চিনবার জন্যে আর তার আমল দিয়ে অনেকসময় চেনা যায় বা ঐটাকে আমল দিয়ে পরিস্কার করা যায়।

মানুষ কাউকে যে ভালবাসে, ভালবাসে ঐ ব্যাক্তিকে, তার বিশেষ কোন আমলকে নয়। তার বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন আমল, সেই ব্যাক্তির প্রতি ভালবাসার উপলক্ষ্য। অমুককে আমি কেন ভালবাসি? বড় বিপদের সময় তাকে আমার কাছে পেয়েছি যখন অন্যরা কাছে ছিল না। কিন্তু এখন ভালবাসি, সেই ঘটনাকে ভালবাসি না, ভালবাসি ওকে।

সেই ঘটনাগুলো উপলক্ষ্য হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে যে ওকে তুমি কেন ভালবাস? ও কোন উত্তরই দিতে পারবে না। এজন্য ভালবাসি এটা কোন উত্তর না, ওকে ভালবাসি ব্যাস এটুকুই। আমাদের যে কারো সামনে যদি একটা সুন্দর গোলাপ ফুল ধরা হয়, আর যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ‘এটা কেমন’? বলে ‘সুন্দর’। কেন সুন্দর ব্যাখ্যা কর। কোন ব্যাখ্যা আছে নাকি? কোন ব্যাখ্যা নাই, সুন্দর ব্যাস এটুকুই। আসল কথা হচ্ছে এটা সুন্দর।

কোন ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে মক্ববুল হয় (কিতাবের মধ্যে পাওয়া যায়), কখনো ঘটনা একেবারেই ছোট, কিন্তু আল্লাহ তাআলা সারা জীবনের গোনাহকে মাফ করে দেন। এক কুকুরকে পানি খাওয়াল। আরো কত বড় গুনাহ হয়ত করেছে। যদি পাল্লায় তোলা হয়, এক কুকুরকে পানি খাওয়ানো আর এর মুকাবিলা তার অনেকগুলো গুনাহ টিকেই না। তো ঐটা আমল কারণ নয়, ওটা একটা উপলক্ষ্য, যে উপলক্ষ্যের কারণে সে প্রিয় হয়ে গেছে।

আর তার বিপরীত হল এমন কিছু দিয়ে  যার কারণে ঐ ব্যাক্তিটা অপ্রিয় হয়ে গেছে, ঘটনাটা উপলক্ষ্য। তো ঐ সুওর বা সচেতনতা অন্তরের মধ্যে গড়ে তোলা যেন আল্লাহর কাছে মকবুল হই। আল্লাহর দৃষ্টিতে সুন্দর হই, আল্লাহ সুন্দরকে ভালবাসেন, এটা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার সব দ্বীন গেল।

যে প্রসঙ্গে কথাটা এসেছিল, তাবলীগে এসেছি সুন্দর অন্তর গড়বার জন্য। এখানে আসার পরে তার রুচি যদি আরো উন্নত না হয়ে আরো অবনত হয়ে যায়, তাবলীগে আসার আগে সে কথার মধ্যে খারাপ শব্দ ব্যবহার করে অভ্যস্ত ছিল না, আসার পরে সে গালাগালিতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। কাউকে মারার ব্যাপারে অভ্যস্ত ছিলনা, মারামারিতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। (এই) ধর, মার। আর এটা তার কাছে এখন ভালই লাগে, অনেকের মনের ভিতর তার সুপ্ত প্রবণতা আছে। এ খারাপ প্রবণতাগুলোকে প্রকাশের সাধারণত সুযোগ পায় না, দমিয়ে রাখে, কিন্তু ইচ্ছা আছে। কখনো কখনো সুযোগ পেলে প্রকাশ পায়।

কয়েক বছর আগে মহাখালি রেল ক্রসিং এর ওখানে এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছিল। বাচ্চা বোধহয় কান্নাকাটি করছিল। কি জানি কে হঠাৎ করে বলেছে যে ‘ছেলেধরা’ বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। (তো) ভিড় একটা এসে আক্রমণ করেছে, ঐ বেচারী মহিলাকে মেরে ফেলেছে আর ছোট বাচ্চাকে মা-হারা করেছে। ওখানেই জানে মেরে ফেলেছে। এরা যে মারল, কি কারণে?

বেশীরভাগ মানুষ দুর্বল, সমাজে বিভিন্ন জায়গায় মার খায়, শারীরিকভাবে না হোক, অবহেলিত, লাঞ্চিত, এর এগুলোর একটা ক্ষোভ তার মনে আছে। রেল লাইনের মধ্যে একজন লোক পেল, এই সুযোগ, একে মার, একে আমি নিরাপদে মারতে পারি। আমাকে কেউ ধরবে না, সবাই মারছে, তার মধ্যে আমিও একজন মারলাম। এছাড়া ওকে মারবার অন্য কোন কারণ নেই। অন্য কোন কারণ যদি থাকত তাহলে খোজ নিত ‘কোন বাচ্চা’ ‘কোন মা’ ‘কি হয়েছে’ ‘কি ব্যাপার’? কোন কিছুর খোঁজ না নিয়ে সে গিয়ে মারতে আরম্ভ করল, তার কারণ এটাই যে ‘মারার একটা সুযোগ, কাউকে কোনদিন মারতে পারি না, মার খেয়েছি অনেক, এই সুযোগে কিছু মারি’।

তাবলীগে আসার পরেও ওর মনের ভিতর এগুলো তো আছে, আর আমরা তাবলীগের মধ্যে যারা এসেছি, আমরা কোন রাজকুমার না, সাধারণ সমাজ থেকেই এসেছি। আমাদের মনের ভিতর এরকম নানান ধরনের দুঃখ, ক্ষোভ এগুলো আছে। এখানে এসে যখন পেয়েছি যে বিরাট ভিড়ের মধ্যে আমি একটা লোককে মারতে পারছি তো এই সুযোগ হাতছাড়া করব কেন?

অথচ এখানে এসেছিল নিজেই হোক বা অন্যদের তশকীল হোক, তাকে বলে কয়ে চেষ্টা করে আনা হয়েছে তার অন্তরকে পাক-পবিত্র করার জন্য। ঐ ওয়াদা করে আনা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পাক-পবিত্র তো আর একদিনে বা এক চিল্লায় হয়ে যায় না। এর মধ্যে যখন একটা সুযোগ পেল, তার উপর তাকে বললে যে ‘এই মারলে তুমি সওয়াব পাবে’- বড় ভাল কথা, এরকম সওয়াব পেলে কে ছাড়ে?

ব্যাপার হল এটাই। মদ তো খেতে চাই, যে আগে থেকে কোন কারণে নেশার মধ্যে ছিল, এখন যদি বলে যে ঐ বারের মধ্যে যারা আছে, এদেরকে গিয়ে তশকিল করে চিল্লায় পাঠাতে হবে। আর এদেরকে যদি তশকিল করতে হয়, তাহলে তাদের মত একজন হতে হবে। তো হিকমত হল প্রথমে গিয়ে তুমিও কিছু গিলবে, তারপর তাকে দাওয়াত দাও। কথা সে মানবে। ও ঐ ব্যাক্তি যে আগে মদ খেত, তওবা করেছে আল্লাহর ভয়ে, মনের টান এখনো বাকি আছে কিন্তু আল্লাহর ভয়ে খায় না, যেহতু হারাম (তাই) গোনাহর ভয় করে। তাকে যদি বলা হয় যে, ‘মদ খেলে সওয়াব হবে, হিকমত, আল্লাহতাআলা হিকমতের সাথে দাওয়াত দিতে বলেছেন, প্রচলিত মৌলভিরা পারবে না, তুমি পারবে’। ও উৎসাহ পেল। তো মদ সে অনেকদিন ধরে খেতে চায়, অনেকদিন ধরে বঞ্চিত, এক বছর ধরে সে তাবলীগে ঢুকেছে, তওবা করেছে, মদ খায় না, (কিন্তু) মনের এই টান আছে। (তো) এরকম যদি সওয়াবের কাজ পায়, কে ছাড়বে?

ব্যাপার অনেকটা এরকম। অনেকে মনে করে একজন ব্যাক্তি কিছু টাকা মারল, দুইশত কোটি টাকা, দুই হাজার কোটি টাকা, তো এর মধ্যে এত ব্যাপক হইচই করে এর মুকাবিলায় গোটা দেশে কাজের যে সুনাম নষ্ট হচ্ছে, এর যে ক্ষতি হচ্ছে, এর মোকাবিলায় দুই হাজার কোটি টাকা কি? একজন বা মারলই। এতে কোন সন্দেহ নেই দুই হাজার কেন, দুইশত হাজারও যদি মারে কোন ব্যাপারই নয়, উম্মতের টাকার কোন অভাব নেই। ঐটা কোন ব্যাপারই নয় যে টাকা হাতছাড়া হচ্ছে এবং মেরেই যাচ্ছে। মনে করা যাক  বিলকুল সত্য কথা যে দুইশত নয়, বরং দুই হাজার কোটি  যা কিছু বলা যায়, এটা কোন মাসআলা নয়, এই টাকা নষ্ট হয়ে যাওয়া।

মাসআলা ভিন্ন। মাসআলা হল কাজ নষ্ট হয়ে যাওয়া। এই কাজ যদি নষ্ট হয়ে যায়, উম্মতের শেষ আশ্রয়স্থল তাবলীগ। একথা শুধু তাবলীগ ওয়ালাদের নয়, অন্যান্য সরাসরি দেশের উল্লেখযোগ্য পীর, উল্লেখযোগ্য আলিম, বাকি আলিমরা যাকে ওস্তাদ মানে, বাকি পীররাও যাকে পীর মানেন, তার কাছ থেকেও সরাসরি শোনা। এছাড়া আরো লোকের কাছ থেকে শুনেছি যে, তাবলীগ ছিল আমাদের শেষ আশ্রয়, নিজে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন আর নিজেই বলছেন যে, ‘মাদ্রাসা তো নষ্ট হয়ে গেছে’, নিজে বড় পীর, এইটাও বলছেন, ‘তরীকাও নষ্ট হয়ে গেছে’, আমাদের শেষ ঠাই হল তাবলীগ, এই তাবলীগও যদি নষ্ট হয়ে যায়, আর মানুষের যাবার কোন জায়গাই নেই। বড় দুঃখ করে এই কথাটা বলেছেন।

কথা সত্য। মাত্র দুহাজার কোটি টাকার জন্য বা যতই হোক, টাকার জন্য তাবলীগ নষ্ট করে, এর চেয়ে বড় যালিম আর কেউ নেই। কোন দাম হয় নাকি? দুহাজার, দুলক্ষ কোটি যতই হোক, এরজন্যে তাবলীগের কাজকে নষ্ট করবে। এর চেয়ে বড় আহাম্মকি, এর চেয়ে বড় জুলুম আর হতে পারে না। ব্যাপার টাকা উদ্ধার করার জন্য নয়, কাজকে রক্ষা করা। যারা পরিচালনা করছে তারা যদি ভুল পরিচালনা করতে আরম্ভ করে, যেমন তাবলীগের নামে আনল তার সুওরকে সুন্দর করবার জন্যে, আর এনে তাকে বানিয়ে দিল ক্রিমিনাল, সন্ত্রাসী, এটা বড় মারাত্মক খেয়ানাত, খুবই মারাত্মক খিয়ানত। আর এটা বড় মাত্রায় হয়ে গেছে, এটা নয় যে হওয়ার পথে, বড় মাত্রায় হয়ে গেছে।

কাকরাইলের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় জিম্মাদার যারা, তাদের একধরনের নয়, বিভিন্ন ধরনের অসৎ আচরণ এগুলো দেশে এখন ব্যাপক। আর উৎস তাবলীগ। ওখানে গিয়ে তাবলীগের মুরব্বী হয়ে তারপর এই সুযোগগুলো সে পেয়েছে। এক কথা হয়তোবা সত্য যে মনে চাওয়া আগে থেকেই ছিল, সুযোগ ছিল না, এখন তাবলীগের কারণে সুযোগ হয়ে যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিন মারল, ওখানকার বিশিষ্ট নেতা হচ্ছে মাওলানা জিয়া। এই নাম যে বলছি, গীবতের মাসআলা সম্বন্ধে সচেতন থেকেই বলছি, নইলে বিনা নামে বলতে পারতাম, কিন্তু নাম উচ্চারণ করেই বলছি। মাওলানা জিয়া যিনি, টিম নিয়ে সন্ত্রাসীসহ এসে আক্রমণ করেছিলেন, পরে যখন ঐ ইউনিভার্সিটির কিছু ছেলেরা, ছাত্রনেতা ওরা এল,  এসে যখন এই নাম শুনল, তখন বলল যে, উনি তো গতকালকে একটা জমির ব্যাপারে আমার কাছে ফোন করেছিল। বিস্তারিত কিছু বলেনি, আমরা যেটা আন্দাজ করেছি ‘জমি দখলের প্রশ্ন’। জমির ব্যাপারে ছাত্রনেতাকে ফোন করার কি দরকার? ফোন করলে জজকে করবে, উকিলকে করবে, দলিলপত্র যাদের তাকে করবে, সবকিছু বাদ দিয়ে ছাত্রনেতাকে ফোন করা জমির ব্যাপারে।

পরবর্তীতে এটাও শুনলাম, সাভার অঞ্চলে তার এখন বিরাট সম্পত্তি হয়ে গেছে। বয়স বেশী নয়, কিছুদিন আগেই মাত্র সাল দিয়েছে, তাবলীগে গিয়ে এক বছর দিয়ে এত নগদ বরকত পেয়েছে যে কিছুদিনের মধ্যে বিরাট সম্পত্তির মালিক। তার ভাইও। তার ভাইকে কিছুদিন আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল, জমিজমার ব্যাপারে, অনেক মারপিটও করেছে, শফিক, সেও বড় গুরুত্বপূর্ণ নেতা। শফিককে আবার যখন শুনি পুলিশ ধরে নিয়ে গেল, কয়েকদিন রাখল, কিছু মারপিট করলো, এইসব জিনিসই হবে, বিস্তারিত জানা যায়নি। কিন্তু খুউব চালাক আবার, পুলিশের হাত থেকে ছুটে বাড়িতে না এসে সোজা চলে গেছে চিল্লায়, কারণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, জানাজানি হবে, তারচেয়ে ভাল এই পুলিশে যাওয়া ও চিল্লার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল, সবই আল্লাহর ওয়াস্তে।

মাসআলা কেউ যদি মদ খায় তাহলে এটা ফিসক, গুনাহ, গুনাহে কবীরা। মদ যদি বিসমিল্লাহ বলে খায় তাহলে কুফর। আর এটা এই ধরনেরই যদি আমরা বুঝতে চাই। যে বারে গিয়ে মদ খেল এটাও গুনাহ, বড় গুনাহ, কিন্তু বোতল এনে মসজিদের ভিতর মদ খেল, ঐটা অনেক বেশী বড়। কারণ যে বারে গিয়ে মদ খেল, সে একটা ইনফিরাদি গুনাহ করল। মসজিদের মধ্যে খেল, এ গুনাহের সাথে গোটা মসজিদকে নষ্ট করছে।

ব্যাপার এইরকমই হয়ে গেছে। শুধু যে একজন ব্যাক্তি তা নয়, সেই ব্যাক্তি আবার গোটা টিমকে তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছে। আর সেই টিম পরবর্তীতে অঞ্চলের মধ্যে কোন একজন সৎ লোক যদি থাকতে চায়, তাকে টিকতে দেয়না,  কাকরাইলের ভিতর তো সম্ভবই নয়, বের করে দিবে। গতকালকে একজন সাথী বলছিল, এই কথা সে আমাকে অনেক আগেও বলেছে, গতকালকে আবার বলল। বেশ কয়েক বছর আগে শুরার একজন সাথী, কাকরাইলের ভিতর হঠাৎ একজন পাগল এসে মেরে ওর পা ভেংগে দিল। তো ঘটনা এই মেরে পা ভেংগে দিল। এর কাছ থেকে শুনলাম। ঘটনা হল ও নিউট্রাল থাকতে চেয়েছিল, বিরোধিতাও করছে না। কিন্তু এগুলোর অংশীদার হতে চায় না, রাজি হয় না, এজন্যে পাগল এনে ওর পা ভাংগাল, সেই পাগল পরিকল্পিত, পেইড পাগল। সে বুঝতে পেরেছে, কিন্তু এরচেয়ে বেশি অগ্রসর হলে এখন পা গেছে, আরো যাবে। তো নিউট্রালও থাকতে পারল না। তোমাকে শেয়ার নিতে হবে, আর এটা শুধু দেশের ভিতরে সীমাবদ্ধ নয়, এটা দেশের বাইরেও চলে যাচ্ছে, যার ফলে এত লোক থাকতে জিয়াই কেন ওখানে আমীর বা মাতব্বর হয়ে গেল। গোটা সাভার অঞ্চলে কি ভাল মানুষ নাই? (আসল কথা হল) টিকতে পারবে না। যেরকম বলে যে অফিসার যদি corrupt (দুর্নীতিগ্রস্থ) হয়, তাহলে নিচের অধীনস্থ যে তাকে দুর্নীতিগ্রস্থ ছাড়া রাখবে না কারণ তার কাছ থেকে নিতে হবে, আর তার কাছ থেকে নিতে হলে…

এভাবে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ভালটা নিঃশেষ হয়ে যায়। অতীতের ধর্মগুলো নষ্ট হল কিভাবে? খ্রিস্টান ধর্ম, আল্লাহর দেওয়া দ্বীন, ঈসা আঃ এর কথা, সেই ধর্ম এত বিকৃত হয়ে গেল। ঈসা আঃ কি বলেছেন, কোন ভাষায় বলেছেন, সেটা পর্যন্ত ঐতিহাসিকরা বের করতে পারে না। কথা তো নাই, (আর) এত বেশি পার্থক্য। বর্তমান বাইবেলের মধ্যে প্রধানত ৪ টা গসপেল আছে। মার্ক, লুক, ম্যাথিউ, জন। বাংলায় নাম একটু অন্য ধরনের, সবগুলোই ঈসা আঃ এর জীবনী বলা যেতে পারে। আমরা যেরকম বলি সীরাত। তার মধ্যে ঈসা আঃ এর কিছু কথা আছে, এই ৪টার মধ্যে এতবেশি পার্থক্য যে একই ব্যাক্তির জীবন বলছে, কিন্তু একটা আরেকটার সাথে কোন মিলই নেই। আসলে বের করা মুশকিল।

ঈসা আঃ এর চেয়েও সাড়ে তিনশত বছর আগের জুলিয়াস সিজার, রোম সম্রাট। জুলিয়াস সিজারের লিখা, তার জীবনী এগুলো হুবহু পাওয়া যায়, কিন্তু ঈসা আঃ এর জীবনী বের করাই মুশকিল। (তো) জুলিয়াস সিজারের সাড়ে তিনশত বছর আগের লিখা (কথা) সব পাওয়া যায়। ঈসা আঃ এর গুরুত্ব বেশি না জুলিয়াস সিজারের? উনার কথা কেন হারিয়ে গেল? সব কেন টিকলনা কেন? এমনি হারিয়ে যায়নি। এগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। জুলিয়াস সিজারকে গোপন করার জন্যে এমন কোন ঠেকা নাই। ওরা কথা থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি। কিন্তু এটাকে দখল করা দরকার, এটা পরিবর্তন না করলে যারা এই ধর্মের নামে জিনিসটা দখল নিয়েছে, তারা তাদের কথা চালাতে পারে না। পরবর্তীতে শেষে যে কথা আছে খ্রিষ্টধর্মের, বড় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ট্রিনিটি, সেটা হলো ত্রিতত্ত্ববাদ। এর সবচেয়ে মূল ডকুমেন্ট-এইটা আরবী। গ্রীক নয়, ল্যাটিনও নয়, হিব্রুও নয়, (বরং) আরবীতে এর প্রথম ডকুমেন্টগুলো পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হল আরবী কেন? আরবী এইজন্যে যে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পরে আরব জাতির উত্থান। তখন সাহাবারা রাঃ, তাবেয়ীরা বা তাবে তাবেঈরা ছড়িয়ে পড়েছেন। অন্যান্য দ্বীনের কথাও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন, লিখেছেন, তারমধ্যে আরবীতে লিখেছেন। ল্যাটিন, গ্রিক ভাষায় যেগুলো ছিল ঐটা তাদের (খ্রিস্টানরা) দখলে ছিল আর তারা ধ্বংশ করে দিয়েছেন। মুসলমানদের হাতে আরবীতে যেটা ছিল, ঐটার উপর তো নিয়ন্ত্রন নাই। ঐটা ছিড়তে বা ধ্বংশ করতে পারেনি। যার ফলে ঐটা রয়ে গেছে।

তো বিদআতীরা তার গোটা অঞ্চলকে, কওমকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়। খোদা না খাস্তা, তাবলীগও যদি ওরকম খারাপ হাতে পড়ে যায়, সে খারাপ কথাকে শুদ্ধ কথা হিসেবে চালাবে, আর দ্বীনের নামে এনে মানুষকে আরো বেদ্বীন বানাবে। এখন পর্যন্ত এদের সন্ত্রাসী কাজে লাগাচ্ছে, এটাতো ইতিমধ্যে বেশকিছু লোককে দিয়ে সন্ত্রাসী কাজ করানো হয়েছে, হচ্ছে। রাজশাহীতে, রংপুরে, ঢাকায় এরা যে এই মারার কাজগুলো করায়, সবগুলো পেইড না, ফ্রি করায়। দুই দিকে তার লাভ। এক হল টাকা দিতে হচ্ছে না, ফ্রি করালো আর দ্বিতীয় হল যে বড় নিরাপদে করতে পারে, পেমেন্ট হলে পুলিশের কাছে ধরা পড়েও যেত। আর দ্বীনের নামে করলে তো ধরাও পড়বে না। ইতিমধ্যে যদি এতদুর এগিয়ে গিয়ে থাকে, যেখানে বাংলাদেশের তাবলীগ একটা অংশ, পুরা দুনিয়াতে তাবলীগের কাজ হচ্ছে, এইটা যদি চলতে থাকে তো কিছুদিন পরে কোন ভালমানুষ এখানে টিকতে পারবে না।

কাকরাইলের ভিতরে শুরাদের মধ্যে একজন শুধু নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েছিল, এইজন্য বাইরে থেকে পাগল আনিয়ে ওর পা ভাঙ্গিয়ে দেওয়া হল। তো সেও বুঝে ফেলেছে।

তো এজন্য আল্লাহতাআলা মেহেরবাণী করে আমাদের দ্বীনের এই কাজ দিয়েছেন, এই কাজকে রক্ষা করা বড় দায়িত্ব। আবার বলছি সমস্যা ব্যাক্তি নয়, সমস্যা টাকাও নয়, কিন্তু সমস্যা হল গোটা কাজ যখন বে-হাতে চলে যায়, ঐটা অসুবিধা হয়ে যায়। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে যে কি চাও? (বাস্তবতা হচ্ছে) ওতো ব্যাপক বিস্তারিত কথা তো সে শুনতে চায় না, হাটতে হাটতে উত্তর একটা পেতে চায়। তখন সংক্ষিপ্তভাবে আংশিক উত্তর হবে। এইটা হয়তোবা বলা যায় যে ‘প্রশ্ন যে করা যায়, প্রশ্ন করার অধিকার আছে, এই নীতি প্রতিষ্ঠিত করা”। পুরো দুনিয়াতে যে কোন প্রতিষ্ঠানে, দ্বীন হোক বা দুনিয়া হোক, যে নেতৃত্বে আছে, যেমনঃ যার কাছে একাউন্ট বা কিছু একটা, তাকে এই প্রশ্ন করার অধিকার আছে যে তুমি হিসাব দেখাও। আর এটা যে কোন কেউ করতে পারে, করা উচিতও। আর এটা বারবার করে দ্বীনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

উমর রাঃ খুতবায় দাঁড়িয়েছেন, উনাকে জিজ্ঞেস করল যে আমরা সবাই কাপড়ের এক টুকরো পেয়েছি, আপনি দু’টুকরো কেমন করে পেলেন? সাধারণ মানুষ। উনি এই কথা বললেন না যে তোমাকে এই প্রশ্ন করার অধিকার দিল কে? এটা করেননি। বরং উত্তর দিলেন। উনার এই সাবিত প্রশ্ন করা আর উমর রাঃ এর ভাল করে উত্তর দেওয়া, এটাই ভাল করে প্রমাণ করে দেয় যে তার প্রশ্ন করার অধিকার আছে আর যাকে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর দেওয়া দায়িত্ব। এটা একমাত্র ঘটনা নয়, সাহাবাদের জীবন এটা দিয়ে ভরা।

টাকা কোন বড় ব্যাপার নয়, আল্লাহর ফজলে মুসলমানদের হাতে টাকা এত আছে যে সেটা কোন ব্যাপারই না। এর চেয়ে দশগুণ টাকা দেওয়ার মত মন উম্মতের আছে। এখানে মৌলিক যেটা সমস্যা (সেটা হলো) যে প্রশ্ন করার অধিকার নেই- (বাতিল) এই নীতি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই একটা জিনিস যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, এর পরে বাকি সব দুর্নীতি তার জন্য বৈধ হয়ে গেল, জিজ্ঞেস করতে পারবে না। আর (হক্বের) মোকাবিলা এটারই। আমাদের যে চিঠি, ঐ চিঠির মধ্যে দাবী এইটাই যে মাসোওয়ারায় কথা উঠানো অর্থাৎ প্রশ্ন করার অধিকার দিতে হবে। (কিন্তু) এইটাতে রাজি নয়। এর জন্যে একেকবার একেক কথা বলে।

একবার বলে ‘মাওলানা সা’দ সাহেব নাকি নিষেধ করেছেন’। প্রথম কথা (উনি) নিষেধ করেন নি। মিথ্যা কথা। দ্বিতীয় কথা, নিষেধ করা থাকলেও আল্লাহর হুকুম এর বিরুদ্ধে কারো কোন কথা মানা যাবে না, সে যত বড় আমীর-ই হোক। আল্লাহর হুকুম মাসওয়ারা, তাবলীগে ঢুকার পরেই প্রথম যে কথাগুলো শিখে তার একটা কথা হল ছয় নম্বর। প্রায়ই দ্বিতীয় কথাই শিখে মাসওয়ারার আদবের মধ্যে-আল্লাহর হুকুম, নবীর সুন্নাত। একজন মাওলানা সা’দ বলল আর আল্লাহর হুকুমও বাতিল, নবীর সুন্নাতও বাতিল। এইটাই যদি হয়, এই জাতীয় দ্বীন শিখবার জন্য আমরা তো এখানে (তাবলীগে) আসিনি। আমরা এসেছি আল্লাহর হুকুম শিখবার জন্য, অন্য কারো নয়। মাওলানা সা’দ সাহেব বলেনওনি। মিথ্যা কথা। বলে থাকলেও এটা গ্রহনযোগ্য নয়। তো একেকবার একেক কথা বলে।

মূল কথা, (তারা বুঝাতে চায়) তোমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই। দূর্ভাগ্যবশত, এই তাবলীগের মধ্যে জড়িত যারা আমাদের দেশের লোক, লাখো নয়, কোটিরও হিসেবে এই বেদ্বীনি নীতি, তাদেরকে দিয়ে মানিয়ে নিয়েছে। তারা এখন গ্রহন করে। একেবারে গ্রাম পর্যায়ে একজন লোক বলে যে, ‘মুরব্বীদের ব্যাপারে এসব প্রশ্ন করা ঠিক নয়’। বলে কিনা? [মজমা জীসূচক উত্তর দিল] কুফরী আক্বিদা গ্রাম লেভেলে পর্যন্ত ঢুকে গেছে। এটা ইসলামী আক্বীদা নয়, ইসলামী আক্বীদা হল জিজ্ঞেস করা যায়, করা উচিত। এই ক’দিনের মধ্যে একেবারে নীচের লেভেল পর্যন্ত লাখো কোটি মানুষকে একটা বেদ্বীনী আক্বীদার উপর যদি উঠিয়ে ফেলে, এরপরে আর দ্বীন থাকলো কোথায়? অথচ উচিত ছিল সাধারণ মানুষ যেন বলে যে প্রশ্ন তো করতে পারে, সে উত্তর দিক। তাও বলেনা। বরং বলে যে মুরব্বীদের উপর এমন বেয়াদবি করলে উচিত শাস্তি হবে, আল্লাহ দেখবে। একথা বলে।

মানে একেবারে একটা কুফরী কথা তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন আগে বলছিলাম পাদ্রী বলছে যে বাইবেলের থুড়ি পরোয়া করি। (অথচ) ও পার পেয়ে যাচ্ছে, কারণ মূলত একথা সে গোটা খ্রিস্টান জগতকে মানিয়ে নিয়েছে যে বাইবেল পড়া তোমার ব্যাপার নয়, আমি যা বলি ঐটাই মানবে। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারবে না।

ব্রাহ্মনরা এই কথা গোটা হিন্দু জগতকে মানিয়ে নিয়েছে যে, বেদে কি আছে, গ্রন্থে কি আছে, ঐটা দেখা, বুঝা তোমার কাজ নয়। (বরং) আমি যা বলি তাই মানতে হবে। এই একটা কথা দিয়ে ব্রাহ্মণ সম্পূর্ণ হিন্দু জগতকে নিজের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। যা বলে তাই মানতে হবে। এই কথা দিয়ে পাদ্রীরা সম্পূর্ণ খ্রিস্টান জগতকে নিজের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। বেদআতিরা এই জাতীয় কথা দিয়েই গোটা মজমাকে তার হাতে নেয়। জায়েজ, নাজায়েজ, হালাল-হারাম কিচ্ছু দেখবে না, (বলবে) আমার পীর বলেছে। এখন পর্যন্ত এরকম আছে যে শুনেছি, রাজশাহীতে আছে, যে পীরের খেদমতের জন্যে রাতের বেলা নিজের স্ত্রীকে দিয়ে দেয়। অথচ সে নিজেকে মুসলমান মনে করে, সওয়াব মনে করে। এটার বিশেষ নাম আছে ‘সিনা চাক’ বলে। এর দ্বারা নাকি অন্তর পবিত্র হয়ে যায়। তো মানুষকে দিয়ে কি না করানো যায়। তাকে যদি ওরকম মেক্যানিজমের মধ্যে ফেলে দেয় তো হাজার জিনিস করানো যায়।

আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর আগে এক লোক একটা ধর্ম বানিয়েছে, তার বেশ কিছু “উম্মত”ও পেয়েছে, প্রায় নয়শত লোক। এদেরকে নিয়ে সেন্ট্রাল আমেরিকার ছোট একটা কলোনিতে গিয়ে বসবাস করতে আরম্ভ করেছে। তার কথা চালায়। এক পর্যায়ে কোন বে-আইনি কাজ করেছে। পুলিশ এসেছে আক্রমণ করার জন্যে। যখন অবস্থা বেগতিক দেখেছে তো সে তার নয়শত লোকসহ আত্মহত্যা করেছে। হত্যা নয়, আত্মহত্যা। নয়শত লোক হত্যা করেছে-তাতো বুঝা যায়, কিন্তু নয়শত লোক নিয়ে আত্মহত্যা করেছে, পরিবারসহ। বিরাট গামলার মধ্যে পটাসিয়াম সায়ানাইড সলিউশন করেছে, সবাইকে বলেছে এগুলো খাও। মায়েরা বাচ্চাদেরসহ ওখানে কলোনিতে ছিল। সিরিঞ্জের মধ্যে নিয়ে বাচ্চাকে ইনজেকশন দিয়েছে, নিজে ইনজেকশন নিয়েছে। আর এরকম করে নয়শত লোক একসাথে সব মরেছে। তো মানুষ এমন ধরনের যে তাকে যদি ভাল করে বুঝাতে পারে, বলতে পারে, তো তাকে দিয়ে আত্মহত্যা করানো যায়, মাকে দিয়ে তার শিশুকেও হত্যা করানো যায়। তাকে দিয়ে তার বউকে দিয়ে দেওয়া এমন কোন বড় ব্যাপার নয়, সবকিছু করতে পারে। তো এভাবে করছে।

গোটা খ্রিস্টান জগত পাদ্রীর কথামত চলছে। আজ থেকে প্রায় আটশত বছর আগে খ্রিস্টানদের যে প্রোটেষ্ট্যান্ট ধর্ম আরম্ভ হল তার আগের কথা। যে ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর ক্যাথলিক থেকে প্রোটেষ্ট্যান্টরা বের হয়ে গেল তার মধ্যে বড় একটা অংশ ছিল যে পাদ্রীরা গির্জাতে জান্নাতের সার্টিফিকেট বিক্রি করত। তো মানুষ কিরকম বোকা (যে) কাগজে লিখা, পাদ্রীর সাইন করা সার্টিফিকেট ঐটা দিয়ে সে মনে করে জান্নাত পেয়ে যাবে। কিন্তু এক-দুইজন নয়, লাখো-কোটি মানুষের কাছে বিক্রি করেছে, প্রচুর টাকা উপার্জন করেছে। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে করে ওড়া চিন্তা করতে লেগেছে যে ‘কি কিনলাম’?

কিন্তু ঐ চিন্তা করতে লেগেছে পঞ্চাশ বছর। তারপর বিদ্রোহ করেছে চার্চের বিরুদ্ধে যে ‘তোমরা কি বিক্রি করলে’? কিন্তু বিক্রি তো করে ফেলেছে, আর এই ‘কি বিক্রি করলে’ এই প্রশ্ন তুলতে তুলতে লেগেছে পঞ্চাশ বছর। তো মাত্র এই একটা কথা বুঝতে তার পঞ্চাশ বছর লাগল? হ্যা-লাগলো।

আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি এটাকে ধরতে পারি, আল্লাহতাআলা ইনশাআল্লাহ আমাদেরকে বহুত বড় আজর দিবেন। এখনো সব মানুষ বেদ্বীন হয়ে যায়নি, এখনো দেশে দ্বীনদার লোক আছে, শুধু একটু ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেছে। শুধু একটু মেহনত করলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ উদ্ধার করবেন। দ্বীনের হিফাজত বা দ্বীনের কাজের হিফাজত যারা করে আল্লাহর কাছে তাদের বড় আজর। আর এর মধ্যে যদি বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, আল্লাহর কাছে বড় আজর পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক নসীব করুক। আ’মিন।

سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهَ

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْك

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُون وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينََ

pdf ফাইল ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

https://www.mediafire.com/?wldh22h016oswe2