দ্বীনের নামে প্রতারণাঃ আমি, আপনি কি আক্রান্ত?

‘রুহ আফজা’ পাকিস্তান ভারতে খুব পরিচিত শরবত, অনেকেই পছন্দ করেন। অনেকেদিন থেকেই তার সুনাম আছে। রুহ আফজার বোতলের ভিতরে যদি মদ ঢেলে দেয় আর লেবেল থাকল রুহ আফজারই, তো লেবেল থাকার কারণে ভিতরে যে জিনিস আছে তার উপর কোন আছর পড়বে না। আর ঐ মদ যদি কেউ খায়, রুহ আফজা লেবেল থাকার কারণে যে মাতাল হবে না, তাও নয়। ঠিকই মাতাল হবে যেরকম মদ খেলে মাতাল হয়। তো দুনিয়ার নানা ধরনের জিনিসে যেরকম প্রতারনা থাকে; ধরা যাক কোন একটা জিনিস বাজারে খুব চলছে, কোন ব্র্যান্ড, তখন তার নকল বের করতে আরম্ভ করে। আল-আমিন বিস্কুট যখন বাজারে খুব চলল তো আরো অনেক নকল আল-আমিন বিস্কুট বের হয়ে গেল, কিন্তু নিম্নমানের।

মানুষ দ্বীন চায়, দ্বীনের কদর আছে। আর দ্বীনের কদর যে আছে ঐটা আল্লাহওয়ালাদের কারণে। এক একজন আল্লাহওয়ালার কারণে এক এক জামানায় এক এক দেশে লাখো কোটি মানুষের কাছে দ্বীনের কদর বেড়ে যায়। ঐ কদর থাকার কারণে অন্যান্যরাও ওখান থেকে ফায়দা নিতে চায়। একই নাম দিয়ে, একই হাব-ভাব দিয়ে সে তার নিজের স্বার্থ লুটতে চায়। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসবার আগে এই গোটা আরব অঞ্চলের মধ্যে বা দুনিয়ার অন্য কোন জায়গায় নবীর আবির্ভাবের কোন কথা, কোন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পরে উনার কারণে অনেকেই ভাবল এটা তো এক বিরাট বিজনেস। একজন, দুইজন নয়, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর কিছুদিনের মধ্যেই অন্ততপক্ষে ত্রিশজন মিথ্যা নবীর দাবিদার আসল। তার মধ্যে মহিলাও ছিল। [মজমার হাসি] তো নবী দাবীদার সেই মহিলা আর এক পুরুষ দাবীদার, তারা দু’জন আবার বিয়ে করে ফেলল।

ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায় স্বতন্ত্র কোম্পানী চালানোর চেয়ে মার্জ করে ফেললে আরো বেশি লাভ হয়, যাকে মার্জার বলে। ব্যাবসার ক্ষেত্রে মার্জার প্রচুর দেখা যায়, যেমনঃ ইউনিলিভার, মার্সিডিজ বেঞ্জ ইত্যাদি। তো ওরা দু’জন বিয়ে করে একটা জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ খুলল। [মজমার হাসি] একসাথে তারা নবুওয়্যাত করবে! সেই বিয়ের পরে হাদীয়া হিসেবে তাদের ‘উম্মতের’ জন্য দুই ওয়াক্ত নামায মাফ করে দিল! তাদের বিয়ে উপলক্ষ্যে। [মজমার হাসি]

তো সব জামানায় মানুষের কাছে দ্বীনের কদর আছে। আর কদর দ্বীনদার লোকের কারণে। ঐ এক নাম বিক্রি করে যুগ যুগ ধরে মানুষ অসৎ ব্যবসা করতে থাকে। ঈসা আঃ তো চলে গেলেন, কিন্তু ঈসা আঃ এর নাম নিয়ে কত ব্যাবসা তো এখনো চলে। আল্লাহওয়ালারা আসেন, তাদের নাম নিয়েও কত ব্যাবসা চলে। গ্রামে পর্যন্ত দেখা যায় লাল বাক্স একটা চেইন দিয়ে আটকে রেখেছে আর বলছে ‘টাকা দাও’। কিনু না কিছু টাকা পেয়েও যায়। আর বিশেষ করে দুর্বল যারা, দ্বীন থেকে দূরে, দ্বীনের উপর চলা মুশকিল হয়, তারাও মনে করে এখানে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে পার পেয়ে যাই! আর মানুষের ভয় কাজ করে। আমাদের দেশে রাস্তার পাশে প্রচুর মাজার আছে আর এই মাজারগুলো প্রায় বেশিরভাগই শার্প টার্নিং এ থাকে। আর সাধারণত শার্প টার্নিংগুলোতে এক্সিডেন্ট বেশি হয়। তো ওখানে মাজার বসায় আর বলে এই মাজারে টাকা না দিলে এক্সিডেন্ট হবে। শার্প টার্নিংয়ের কারণে অনেক এক্সিডেন্ট হয়েও থাকে। তখন বলে যে এরা মাজারে টাকা দেয়নি, এজন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে। একবার একজন ওয়াজ করছিল রাজশাহীতে, বলতে পারি না কি নাম, ঐ আহলে হাদীসদের ওয়াইজ, কিন্তু কথাটা শুদ্ধ লেগেছিল। কথাটা কি? ‘এরা যেসব পীরদের নামে টাকা তুলে, এই পীররা হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাছে নালিশ করবে যে, ‘হে আল্লাহ, এরা আমাকে ছিনতাইকারী বলত। ছিনতাইকারী হিসেবে এরা আমার দুর্নাম রটিয়েছিল। টাকা না দিলে নাকি আমি এক্সিডেন্ট করাতাম’।

তো মানুষ বিভিন্নভাবে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য দ্বীনকে ব্যাবহার করে। দেওয়ানবাগী, আটরশি আরো কিকিসব আর এগুলো চলতেই থাকবে। যখনই কোন একটা জিনিস মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে, তখনই ঐটাকে ব্যাবহার করে। আল্লাহর মেহেরবানী, আল্লাহওয়ালাদের কুরবানি, মানুষের কুরবানির কারণে তাবলীগের কাজ পুরো দুনিয়াতে বড়ভাবে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেছে। চাইলেই বিভিন্ন ধরনের মানুষ এখান থেকে তার ফায়দা নিতে পারে। এই বিষয়ে হযরত মাওলানা পালনপুরি রহঃ উনার হায়াতের শেষের দিকে খুব বেশি বয়ান করতেন। উনার জীবনের শেষের দিকের বয়ানের বড় একটা অংশ এইটার উপর থাকত যে ‘দুনিয়াদাররা এসে ভীড় করবে’। হয়ত এরকম প্রবনতা উনি লক্ষ করেছেন।

আল্লাহতাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন আর আমাদের যাচাই করার দায়িত্ব দিয়েছেন আর আক্বলও দিয়েছেন। প্রত্যেকের দায়িত্ব দ্বীনের মানদন্ডে সে যেন দ্বীনকে বিচার করে। যারা নির্ভরযোগ্য দ্বীনদার, তাদের আচরন, তাদের কথা, তাদের দৃষ্টান্ত – ঐটা যদি চোখের সামনে থাকে, পরবর্তীতে প্রতারক যারা আসে তারা বেশি সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা মূলকে যথেষ্ট নজরের মধ্যে রাখি না – যার কারণে প্রতারকরা এসে সুযোগ পায়। মূল নজরের মধ্যে থাকলে প্রতারকরা সুযোগ পেত না। এই যে আমাদের দেশভরা, গ্রামে গ্রামে চিশতীয়া, কাদেরিয়া, মুজাদ্দেদিয়া ইত্যাদির নাম করে (কত কিছু করে)।

তো মূল যারা ছিলেন তাদের দৃষ্টান্ত, জীবনী যদি আমাদের চোখে থাকত। যেমনঃ কয়েকটা জিনিস। এক হল-নিজে সম্পদলোভী ছিলেন না, তাদের সংস্পর্শে যারা আসত, তাদের অন্তর থেকে সম্পদের মোহ কমে যেত, বাড়ত না। মুরিদ একজন জিকির করতে আরম্ভ করল, যদি জিকিরের আছর বেশি নাও পড়ে, সম্পদের মোহ কমল না, কিন্তু এটুকু নিশ্চিত যে বাড়বে না। তার ব্যাক্তিগত জীবনে শরীয়তের পাবন্দী বাড়বে, হালাল-হারামের সচেতনতা বাড়বে, এগুলো হল মৌলিক কিছু জিনিস। মূল প্রতারক যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে খুব বেশি চালাক হয়, তার প্রতারণা সরাসরি ধরা যায় না, কিন্তু ওর অনুসারী যারা, তাদের দিকে লক্ষ করলে তখন একজন মানুষ বুঝতে পারবে যে মূলটা ভাল না মন্দ। মোটামুটি এইধরনের যে আমগাছের পাতা দেখে বিচার করা যে এটা ল্যাংড়া নাকি ফজলি-এটা এক্সপার্ট ছাড়া পারবে না। কিন্তু খেয়ে পার্থক্য করা যে এটা ফজলি নাকি আশ্বিনা-এটা খুব সহজ।

ওরকম মূল প্রতারকের দিকে লক্ষ করে ও সত্য না প্রতারক-এটা বেশিরভাব মানুষ ধরতে পারবে না, কারণ যে এতবড় প্রতারক সে খুব চালাকও হয়। কিন্তু তার অনুসারীদের দিকে যদি লক্ষ করা হয়, তখন ধরা পড়ে সহজেই। অনুসারীরা কারা, আসার পরে তাদের আচরণের পার্থক্য কোন ধরনের, মাল-দৌলত সম্পদ বাড়ল না কমল ইত্যাদি। খুব দূর্ভাগ্যবশত আজকাল চোখে পড়ছে যে তাবলীগে আসার পরে বড় দ্রুত বিভিন্ন অঞ্চলে, এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন অঞ্চলে বড় দ্রুত কিছু লোক তাবলীগের মুরব্বী কাম সম্পদশালী হয়ে যাচ্ছে।

কোন সম্পদ ছিল না, অন্য কোন ব্যাবসাও নাই, একেবারে শ্রেফ গায়েবি মদদ!!! [মজমার হাসি] বিরাট বিরাট দামি জমির মালিক হয়ে যাচ্ছে। এটা যদি লক্ষ্য করি যে কার সাথে তার সম্পর্ক, বুঝতে পারবে যে প্রতারনা কোথায়। কারণ তাবলীগে এসে তার সম্পত্তি বাড়ার কথা নয়। দ্বীনদার লোকের মধ্যে সম্পত্তি যে  হয় না-তা নয়। নবীও ছিলেন সুলাইমান আঃ, দাউদ আঃ; ছিলেন বাদশা নবী। সাহাবাদের মধ্যে আব্দুর রহমান রাঃ ছিলেন অত্যান্ত ধনী ব্যাবসায়ী। বড় সাহাবী-ওগুলো ছিল। প্রথম কথা হল নবী হওয়ার পরে সুলাইমান আঃ বাদশা হননি, ছিলেনই । সাহাবী হওয়ার পরে আব্দুর রহমান রাঃ ধনী হয়ে যাননি; এটা উনার আগে থেকেই ছিল। বরং বেশিরভাগ হল ধন-দৌলত ছিল, কমে গেছে। আবু বকর সিদ্দীক রাঃ, উসমান রাঃ আরো অনেক সাহাবী।

আল্লাহ তাআলা ধনী মানুষকে, ব্যাবসায়ী মানুষকে হিম্মত দেওয়ার জন্য হয়তোবা যাতে তারা নিরাশ না হয়ে যায়, এজন্য কিছু কিছু ব্যাতিক্রমী ধনী লোকও রেখেছেন। যাতে ধনীরা নিরাশ না হয়ে যায়, যে আমি তো জাহান্নামী হয়ে গেলাম। কিন্তু আমভাবে হল ঐটাই। কিন্তু যদি তার ব্যাতিক্রম দেখা দেয়, আর বিশেষ করে তার কাছের আচরণ, তার লোকের সাথে উঠাবসা ইত্যাদি যদি লক্ষ্য করে, তাহলে বুঝা যাবে মূল জিনিস মোটেই শুদ্ধ নয়। নাম, লেবেল ভাল কিনা ঐটা দিয়ে কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। বোতলের ভিতরে যদি থাকে মদ, তার লেবেল রুহ আফজা থাকুক আর যে শরবতই থাকুক, ঐ লেবেল দিয়ে কিছু আসে যায় না। ঐটা যদি কেউ খায় তাহলে সে ঠিকই মাতাল হবে।

কোন একজন পীরের বেশভুষা যতই থাকুক না কেন, ওর দ্বীলের ভিতরে যদি দুনিয়ার মোহাব্বত আর প্রতারণা থাকে, যে ওর সাথে সম্পর্ক করবে তার ভিতর ঐ প্রতারণা, দুনিয়ার মোহাব্বত ইত্যাদি বাড়ানোর প্রবনতা হবেই। এর এজন্য সে আসলে এসেওছে বা ঐ আশাতেই এসেছে। বা হয়ত কখনো আসবার সময় দ্বীন মনে করেই এসেছে, কিন্তু তার কাছে গেলে তার মধ্যে ঐ আকর্ষন পয়দা হয় যে আমিও সম্পদশালি হয়ে যাই, ধনী হয়ে যাই। আজ দেখা যাচ্ছে এটা, বিশেষ করে বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মধ্যে দেখা যায়, তাবলীগে যাওয়ার পরে দুনিয়ার প্রতি ওর মোহ আরো বেড়ে গেছে। সাধারণ ছেলের তুলনায় এইসব তাবলীগী ছেলেদের দুনিয়া খাই খাই ভাব আরো বেশি। এতে বুঝা গেল যে ও দ্বীনের নামে যে মেহনতের মধ্যে এসেছে, ঐটার মধ্যে গভীর কোন প্রতারণা আছে। নইলে দুনিয়ার মোহ বাড়ার কথা নয়। এটাতো আল্লাহর মেহেরবাণী যে সে নামাযের পাবন্দী হয়েছে, দাড়ি রেখেছে, আরো কোন কোন ব্যাপারে দ্বীনদারি এসেছে। একেবারে যে আসেনি তা নয়, আল্লাহর ফজলে ঐটাও এসেছে। কিন্তু তার দুনিয়ার বড় বড় চাকরীর মোহ, সম্পদের মোহ এগুলো বেড়ে যাওয়াতে আগের তুলনায় বা ওর বন্ধুবান্ধব যারা তাবলীগে আসেনি তাদের তুলনায় ওর মধ্যে দেখা যায় যে দুনিয়া খাওয়ার চেষ্টা আরো বেশি। আমার কাছে এমনই মনে হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি, বুয়েট, কৃষি ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। বুঝে নিতে হবে যে এর ভিতরে বড় মারাত্মক ধরনের কোন প্রতারণা আছে, ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃত হোক, আছে। কারণ দ্বীনের বড় অংশ হল দুনিয়ার মোহাব্বত কমা। দ্বীনের মৌলিক জিনিস এটা।

(সম্ভবত) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ তাবেয়ীদের এক মজলিসে গেলেন। এই মজলিস তাবেয়ীদের। এই মজলিসে তাবেয়ীদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ বললেন ‘তোমরা ইবাদত বন্দেগী সাহাবাদের তুলনায় বেশি কর কিন্তু সাহাবারা তোমাদের চেয়ে ভাল ছিল’। মজলিসের মধ্যে উপস্থিত একজন উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে ‘হে আবু আব্দুর রহমান, যদি আমরা সাহাবাদের চেয়ে ইবাদত বেশি করি তাহলে সাহাবারা আমাদের চেয়ে ভাল কেন ছিল?’ উত্তরে উনি বললেন যে, তারা তোমাদের চেয়ে বেশি যাহিদ ফিদ দুনিয়া আর রাগিব ফিল আখিরাত’। দুনিয়ার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে বেশি যাহিদ (অনীহা, অনাগ্রহ) আর আখিরাতের ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে রাগিব (আসক্ত, আগ্রহী)। আমল কিন্তু অতবেশি ছিল না। আমল বেশি করলেই যে সে আখিরাতমুখী, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় দুনিয়ার জন্য আমল করে। মোকদ্দমায় ফেঁসে গেছে, সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ছে। তাহাজ্জুদ পড়ছে কিন্তু আল্লাহকে পাওয়ার জন্য নয়, মোকদ্দমা জিতবার জন্য। তো দ্বীন না দুনিয়া ঐটার বিচার তো সে কি করছে ঐটা দিয়ে নয়, বরং কেন করছে।

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ

قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمً যে রাতের অংশ যাপন করে সিজদায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ নামাযে মধ্যে, কিয়ামের মধ্যে يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّه আখিরাতের প্রস্তুতি নেয় আর আল্লাহর রহমতের আশায়…

তো শুধু রাত যাপন করা, ক্বিয়াম সিজদা করা ঐটা ইবাদত নয়, ঐটা দ্বীনদারিও নয়, ঐটা যদি আখিরাতের জন্য করে তবেই দ্বীনদারি হবে। ঐটা দুনিয়ার জন্যও করতে পারে, আর করেও। দুনিয়ার জন্য করার বিভিন্ন ধরন আছে। এক তো হল একেবারেই প্রতারক। দাঁড়িয়ে আছে, তাহাজ্জুদ দেখাচ্ছে অথচ ওযুও করেনি, ঐটা হল একেবারে ঠিকই প্রতারক। [মজমার হাসি] কাফির, মুশরিক হতে পারে।

আরেক আছে, ওযু ঠিকই করেছে, নামায পড়ছে নির্জন জায়গায়, কেউ দেখছে না। তো সে কি আল্লাহওয়ালা হয়ে গেল? না। সে নামায পড়ছে আর আল্লাহর কাছ থেকেই চায় মোকদ্দমা যেন জিতে। জজকে দেখাচ্ছে না, উকিলকেও দেখাচ্ছে না, কেউ দেখছে না, নির্জন জায়গায় আল্লাহর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার লক্ষ্য হলো দুনিয়া, মোকদ্দমা জিতা। তো এই ব্যাক্তি একেবারে প্রচলিত অর্থে প্রতারক নয়, কিন্তু সে আল্লাহওয়ালাও নয়। যেহেতু তার লক্ষ্য দুনিয়া, যদিও আবিদ কিন্তু আল্লাহওয়ালা নয়।

এই জাতীয় একটা অর্থ সম্ভবত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাঃ কথার মধ্যে ছিল যে তোমরা ইবাদত বেশি কর, কিন্তু সাহাবারা তোমাদের চেয়ে বেশি ভাল ছিল। বলছেন কিন্তু আমাদের জমানার মানুষকে নয়, তাবেয়ীদের বলছেন। ‘তোমরা ইবাদত বন্দেগী সাহাবাদের তুলনায় বেশি কর কিন্তু সাহাবারা তোমাদের চেয়ে ভাল ছিল’। কেন ভাল ছিল? সাহাবারা দুনিয়ার ব্যাপারে বেশি অনাগ্রহী আর আখিরাতের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলেন। আমার দ্বীনদারি তখনই বাড়বে যদি আমার মধ্যে দুনিয়ার আগ্রহ কমে আর আখিরাতের আগ্রহ বাড়ে। এটা হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানদন্ড।

আর আমি দ্বীনের মধ্যে গেলাম, চিল্লা দিলাম, তিন চিল্লা দিলাম আর আমার দুনিয়ার আগ্রহ যদি বেড়ে যায়। (ধরা যাক) ইবাদত বাড়ল, আগে দাড়ি ছিলনা, এখন দাড়ি আছে, আগে টুপি ছিলনা এখন টুপি আছে। এসব ঠিক আছে, কিন্তু আমার দুনিয়ার আগ্রহ যদি বেড়ে যায়, আগের চেয়ে কমলো তো না-ই বরং আরো বেশি হয়ে গেল- তাহলে তো বড় খারাপ দিকে যাচ্ছি। অনেকসময় আনুসাঙ্গিক কারণে হয়ে যায়।

গ্রামের একজন সাদাসিধা অশিক্ষিত মানুষ। তাবলীগে এসে খুব মেহনত করল, মেহনত করার কারণে ওখানে অন্যান্য তাবলীগীদের সাথে তার পরিচয় হল, আর তারা তার খুব খাতিরও করে আর খাতির করে বড় বড় অফিসাররা। ডিসি, এসপি, জজ এরা দ্বীনের কারণে খাতির করে। কিন্তু ঐ বেচারার জন্যে এই খাতির হজম করা মুশকিল। যে ব্যাক্তি কখনো ডিসির বাড়ির এরিয়ার ভিতরে ঢুকতে পারনি আর তাকে যদি এখন ডিসি নিজের গাড়িতে করে পাশে বসিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে সে এমন নতুন একটা স্বাদ পাবে -কিছু লোক আছে এটা হজম করতে পারে, কেউ কেউ পারে না।

আমরা অনেকে সময় টাকা পয়সা চাইনা। কিন্তু আমি যে একজন ডিসির সাথে পাশে বসছি, লোকে দেখুক এটা আমার মন চাই। আর কেউ যদি আমাকে একটু তাচ্ছিল্যের সাথে কথা বলে, যেটা আগে আমি সহ্য করতে পারতাম, এখন আর সহ্য করতে পারিনা। কেন? কারণ এখন আমি যেনতেন লোক না। আগে যেনতেন লোক ছিলাম। লোকে যদি ধাক্কা দিত, ‘বস’, তাহলে বসে যেতাম, কিন্তু এখন আমি আর যেনতেন লোক না। আমি ডিসির সাথে গাস্ত করি ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব কারণেও হয়ে থাকে যেটা সরাসরি তাকে দোষ দেওয়া যায় না। কিন্তু এছাড়া যাদের সাথে আমি যাচ্ছি, তাদের দুনিয়ার (আগ্রহ) প্রবল হওয়ার কারণে তবলীগে যাওয়ার পরে আমি এদের সাথে উঠাবসার কারনে আমার দুনিয়ার মোহ বেড়ে গেছে। এই জিনিস যদি হয়, তো আমি বড় খারাপ পথে চলছি।

বলা হয়, প্যারিসে গিয়ে যে নষ্ট হল, ওর ভাল হওয়ার জায়গা আছে, মক্কায় যাবে। কিন্তু মক্কায় গিয়ে যে নষ্ট হল, ও কোথায় গিয়ে ভাল হবে? প্যারিসে গিয়ে তো আর ভাল হবেনা। ঠিক ওরকম দুনিয়ার পরিবেশে থেকে যে নষ্ট হল, তার জন্যে ভাল হওয়ার জায়গা আছে। (কিন্তু) দ্বীন; দ্বীনে গিয়ে যে নষ্ট হল, ও কোথায় গিয়ে ভাল হবে? ওর আর কোন জায়গাই নাই।

তো আমাদের নিজেদেরও সতর্ক হওয়া, আর অন্যান্যদের ব্যাপারেও আমাদের চিন্তাফিকির করা। কখনো কখনো মানুষ, বিশেষ করে নতুন যারা তবলীগে এসেছে, তার একটা জযবা থাকে ‘একে ওকে সাহায্য করব’। তো কেউ চিল্লায় যেতে চায়, টাকা নাই। তো তাকে পকেট থেকে দিয়ে দিল। সে তো ভাল নিয়্যতেই দিচ্ছে, কিন্তু যাকে দিল, অনেক ক্ষেত্রেই তার ক্ষতি হল। ও এসেছিল আল্লাহর কাছ থেকে নেওয়া শিখবার জন্য, আর এসে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া শিখে ফেলল। (আর) তার ক্ষতি হয়ে গেল। এর মধ্যে যে দিয়েছে না বুঝে হলেও সে দোষী। সাহায্য করাও দরকার, এটাও শরীয়তের হুকুম আছে, প্রয়োজনও আছে, কিন্তু বুঝে শুনে। এজন্য উত্তম জিনিস হল নির্ভরযোগ্য লোকের সাথে পরামর্শ করা। তা না হলে তার উপকার করতে গিয়ে ক্ষতি করে ফেলবে। ও এসেছিল আল্লাহর কাছ থেকে নেওয়া শিখবার জন্য, তাকে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া শিখিয়ে দিল। এখন সে এর পরবর্তীতে যখন চিল্লায় যাবে তখন ধনী লোকের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করবে। মন চাইবে ধনীদের সাথে যাই, আর ধনীদের সাথে যাই এজন্য যে অপেক্ষা করবে কোন ফাঁকে ওরা দিবে। এটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

তো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীন দিয়েছেন, দ্বীন তো শুদ্ধ, কিন্তু আমাকে তার শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে। তাবলীগের কাজের মধ্যে মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর কথা, মালফুজাতে আছে। সুযোগ পেলেই একথা বলি যে, ‘মালফুজাত’ (মঞ্জুর নোমানী রহঃ এর) আর ‘মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এবং তার দ্বীনী দাওয়াত’ (নদভী রহঃ এর) এই দুটো বই যেন সব তবলীগওয়ালাদের কাছে থাকে আর এটা যেন তার হাতের কাছে থাকে, যখন তখন যাতে পড়তে পারে। শুধু যে এটা সিলেবাসের বইয়ের মত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একবারে পড়ে ফেলল ওরকম নয়। হাতের কাছে থাকলে উল্টাবে-পাল্টাবে, যখন তখন পড়বে। একটা হয়ত সতেরবার পড়া হবে আরেকটা হয়তো একবারও পড়া হবে না, কিন্তু যদি উলট-পালট করতে থাকে, আল্লাহ তাআলাই হয়তো কখনো কখনো তার সামনে ঐটাই খুলবেন, যেটা ওর জন্য দরকার ছিল। ‘মালফুজাত’ আর ‘মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর দ্বীনী দাওয়াত’ – এই দুটোর চর্চা থাকলে মূল উৎস কি, ঐটা আমার চোখের সামনে ভাসবে। তখন পথে আসা জিনিস বুঝতে পারব, কোথায় গন্ডগোল।

বহুদিন আগে আমার পরিচিত একজন, তার শখ হল ব্যাবসা করবে। সে ব্যাবসা জানে না, কিন্তু করার দরকার, অন্য কিছু নাই আর ওর পকেটে টাকা আছে। তো সস্তায় পেল ডেটল, এন্টিসেপটিক বোতল। সস্তায় পেয়ে অনেকগুলো কিনল, এসে খুচরা বিক্রি করবে বলে। আনার পরে দেখে সব দুই নম্বর। ডেটলের বোতলে উপরে সীল ঠিকই আছে, কিন্তু ভিতরের জিনিস ভিন্ন। এই প্রতারনা থেকে সাধারন মানুষের জন্য বাঁচার একটা উপায় হল যে শুধু ডেটলের শিশি না দেখে একেবারে পাশাপাশি নিয়ে যদি মূলটা আর নকলটাকে একসাথে রাখে, দুটোর মুখ খুলে, দুটোর গন্ধ একসাথে নেয়, তখন হয়তো নন-এক্সপার্টও ধরতে পারবে। কিন্তু গতকালকে দেখেছিলাম আসল ডেটলের শিশি, আর আজকে দেখছি এই  ডেটলের শিশি, তাহলে পার্থক্য বুঝা মুশকিল। গতকাল আসল ডেটলের গন্ধ নিয়েছি আর আজকে এই নকল ডেটলের গন্ধ নিচ্ছি, তাহলেও পার্থক্য বুঝা মুশকিল। একই সাথে যদি দুটোর গন্ধ নিই, একই সাথে পাশাপাশি দাড় করিয়ে যদি দুটোকে দেখি, তাহলে আশা করা যায় যে ধরা পড়বে।

মালফুজাত ও মাওলানা ইলিয়াস ও তার দ্বীনী দাওয়াত – এগুলোর যদি সবসময় চর্চা চলত, আশা করা যায় ভুল-ত্রুটি বা প্রতারনা যেটাই হোক না কেন চোখে ধরা পড়বেই। আর তা না হলে সাধারণ মানুষের জন্য এসব ধরা মুশকিল। মালফুজাতের মধ্যে একটা কথা আছে, দুনিয়ার যত কাজ হয়, মানুষ স্বার্থ উদ্ধার করে তিনটা ‘জে’ কে ব্যাবহার করে। আরবীতে বলে ‘জা’, উর্দুতে ফার্সীতে বলে ‘জে’। জোর, জর, জারি। জোর হল শক্তি, জর হল সোনা, জারি হল কান্না।

মানুষ তার স্বার্থ হাসিল করবার জন্য, রাজা বাদশারা শক্তি প্রয়োগ করে। ব্যাবসায়ীরা, ধনীরা জর সোনা ব্যাবহার করে অর্থাৎ সম্পদ। আর তৃতীয়টা হল জারি মানে কান্না। আমাদের দেশে জারি গান বলে। জারি গান মূলত যেটার কোন বিষাদ গল্প থাকে, যেমন কান্নাকাটি। দ্বীনের কাজ ‘জোর’ এও হয়না, ‘জর’এও হয়না, ‘জারি’তে হয়। দ্বীনের কাজের মধ্যে ঢুকে যদি আমি দেখি সম্পদ প্রয়োগ করছে, সম্পদের লেনদেন হচ্ছে, আরেক ধাপ আগে অশুদ্ধ লেনদেন হচ্ছে বা শক্তি প্রয়োগ করছে, বুঝে নিতে হবে এটা দ্বীনের কাজ নয়।

আর এটাতো খুব সহজেই ধরা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, কেন প্রতারিত হচ্ছে? যদি মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর এই ছোট্ট কথাটা ওর নজরে থাকতো যে দ্বীনের কাজ তো টাকা-পয়সা দিয়ে হয়না, দ্বীনের কাজ শক্তি প্রয়োগ করে, ভয় প্রদর্শন করেও হয়না, দ্বীনের কাজ চোখের পানি ফেলে হয়। এখানে তো চোখের পানি ফেলছে না, বরং টাকা-পয়সা ঢালছে, ভয় দেখাচ্ছে – নিশ্চয় এটা দ্বীন নয়। বুঝা কঠিন হত না যদি মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর এই কথা তার সামনে থাকত। কিন্তু যদি না থাকে প্রতারিত হবে আর হচ্ছে। নজরের সামনে থাকা দরকার। গতকালকে দেখেছি আসল ডেটলের বোতল আর গতকাল নিয়েছি আসল ডেটলের গন্ধ, আর আজকে দেখলাম নকট ডেটলের বোতল, নকল গন্ধ – গতকালের সাথে আজকের এই তুলনা করা অনেকেই পারবে না। একই সাথে যদি তুলনা করি, তাহলে হয়তোবা পারবে।

তো আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন। চেষ্টা যদি বান্দা করে, তাহলে তার বাচার উপায় আছে, তবে তাকে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকতে হবে। হাদীস শরীফে খুব তাকিদ আছে ‘গরীবদের সাথে থাক’। আমাদের মন চাই ধনীদের কাছে থাকি। ঢাকায় বিশেষ করে ইজতিমার আগে ভিআইপি জামাআত বের হয়। কিছু কিছু লোক আমি চিনি, সারা বছর অন্য আর কোন তবলীগ করেই না, কিন্তু ভিআইপি জামাআতের সাথে যতদিন দরকার ততদিন দিবে, কিন্তু এর বাইরে না। সে বেচারা – আল্লাহ জানে, হয়তোবা সে মনে করে দ্বীন, আসলে ওর আগ্রহ হচ্ছে বড় অফিসার, বড় শিল্পপতি এদের সাথে থাকা। এতে যে টাকা-পয়সা বেশী কিছু পাচ্ছে তাও নয়, কিন্তু ভাল লাগে। একজন শিল্পপতির পাশে বসলাম, একটু দোস্তী করলাম। হায় দোস্ত! এই বলাটাই আমার স্বার্থকতা।[মজমার হাসি] এর মোকাবিলায় গরীবদের সাথে থাকার মধ্যে আল্লাহ তাআলা বড় ফায়দা রেখেছেন।

তো ওরকম কোন ভিআইপি জামাআতে একজন গরীব লোক গেছে। আসলে সে যায়নি, (বরং) ওকে নিয়ে গেছে। আর কিছু ধনী লোক ছিল। ঐ গরীব লোক রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদে  খুব কাঁদছে, তার পাশেই একজন বড় ব্যাবসায়ী, উনি লক্ষ্য করেছেন, ঘুম ভেঙ্গে গেছে। লক্ষ্য করলেন খুব কাঁদছে, কৌতুহল হল। পরেরদিন এক সুযোগে তাকে এত কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ও বলল, ‘আল্লাহর কাছে আমি কি জবাব (হিসাব) দিব – এই ভয়ে কাঁদছি’। উনি জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনি কি করেন?’ সে বলল ‘মাছ ধরি’। মাছ ধরার কথা শুনে শিল্পপতি সাহেব তার নিজের মত করে মনে করেছেন যে ট্রলার ইত্যাদি আছে। আসলে ওর আছে একটা উড়াল জাল। রাস্তায় রাস্তায় হাটে, ড্রেনে জাল ফেলে, কখনো পুটি, কখনো ট্যাংরা এক-দুইটা উঠে, কিছু হয়ত নিজে খায় আর কিছু পাঁচ-দশটাকায় বিক্রি করে – এভাবেই ওর চলছে। কিন্তু উনি নিজের মত আন্দাজ করেছেন যে বোধহয় ট্রলার ইত্যাদি আছে, ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি। আরো যখন ঘাটাঘাটি করলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে আসলে ট্রলারও নয়, ফিশিং ইন্ডাস্ট্রিও নয়, একখানা উড়াল জাল মাত্র। উনার দ্বীলে খুব ধাক্কা লাগল যে মাত্র একটা উড়াল জাল তার, আর সেটা নিয়ে সে চিন্তিত ‘হিসাব দিবেন কেমন করে’। তো আমার কি উপায় হবে?

তো গরীবদের সাথে থাকলে এই ফায়দা হবে। উনার দ্বীলে খুব আছর পড়ল যে আমি যে লাখো কোটি টাকা নিয়ে হামেশা খেলছি, কখনো তো আমার চিন্তাই হয়না যে হিসাব দিব কেমন করে। আর মাত্র কয়টা পুটি মাছ ধরে আর ওর চিন্তা যে কি হিসাব দেবে!

কিন্তু তার বিপরীত যদি হয়, লাখো কোটি টাকা, তখন অপর কথা মনের মধ্যে ঢুকবে। মন বলবে তবলীগ আমিও করি, আর তবলীগ সেও করে। আর আমার তবলীগ কি দুই নম্বর নাকি! এত বছর তবলীগ করেও একখানা ফ্লাটই কিনতে পারলাম না আর কত বিল্ডিংয়ের মালিক সে হয়ে গেল। ধুর! শেষ কথা এটাই হবে। [মজমার হাসি]

যার সম্পদ, টাকা পয়সা দেখছে, হতে পারে তার সম্পূর্ণটা হালাল এবং সে একজন মুত্তাকী, পরহেজগার ব্যাক্তি – সেটা ভিন্ন। মুত্তাকী, পরহেজগার লোক সম্পদশালী হয়না, এমন নয়। বড় বড় আল্লাহওয়ালারা বিরাট সম্পদশালী হন, যদিও ওগুলো খুবই কম। কিন্তু একেবারে অসম্ভব, তা নয়। কিন্তু উনাদের তাকওয়া, পরহেজগারি আমি দেখলাম না, দেখলাম শুধু দামি গাড়ি আর দামি জায়গায় তার বাড়ি, এটা দেখে আমি নষ্ট হয়ে গেলাম। (তো) ধারে কাছে যাওয়াই নিরাপদ নয়। এজন্য বড় তাকিদ আছে গরীবদের সাথে থাকার। খুব তাকিদ আছে। রিয়াদুস সালেহীনে স্বতন্ত্র বাব আছে। এতে নিজের শুদ্ধতা আসে।

করাচী থেকে মাস্তুরাতের জামাআত গেছে পেশোয়ার। পেশোয়ার ওয়ালারা বলছে ‘ভাই জামাআতের নূসরত কর’। নূসরত মানে তাদের পরিবার নিয়ে ওদের কাছে নূসরত করতে গিয়েছে। একদিন গিয়ে দ্বিতীয় দিন আর অনেকেই যায়না। কেন? ঐ করাচীর মহিলাদের সাথে প্রথমদিন বসেই আমার বিবি নষ্ট হয়ে গেছে। [মজমার হাসি] তার জামা-কাপড়, গয়নাগাটি, অলংকার, কথাবার্তার ধরন – একদিনেই আমার বউকে নষ্ট করে দিয়েছে। কারণ খারাপের আছর দ্রুত পরে। আর এটাতো আমাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। পরিবারের দিক থেকে এরবাড়ি, ওরবাড়ি যায়। তবলীগওয়ালাদের যাদের বাড়ি যায় তাদের মধ্যে গরীব মানুষও আছে, ধনীমানুষও আছে। গরীব একজনের বাড়ি গিয়ে ফিরে এসে আমার বউ এইকথা বলেনা যে ওর বাড়িতে তো কিছুই নাই, আমার বাড়িতে এত বেশি জিনিস কেন? এগুলো সদকা-খয়রাত করে কিছু কমাই – একথা বলে না। কিন্তু ধনী বাড়িতে গিয়ে কোন একটা জিনিস দেখল যেটা আমার বাড়িতে নাই, ব্যাস, সে লাফালাফি শুর করে ‘সেও তবলীগ করে, তুমিও তবলীগ কর, আর তুমি ফকির এর মত কেন? আসলে তোমার তবলীগই দুই নম্বর। জেনুইন তবলীগ করলে তোমারোতো এরকম টাকাপয়সা  থাকত। [মজমা  হেসে ফেলল]। তো তোমরা অনেকেই হাসছ, কারণ বোধহয় তোমাদের অভিজ্ঞতা আছে এরকম। [মজমা আবার হেসে ফেলল]।

তবলীগের কাজ এমন যে আমরা ধনী লোকের কাছে যাবই না, যেতে পারবই না এমন না। সরে থাকা মুশকিল। কিন্তু আমার নিজের সতর্কতা আমি অবলম্বন করব। সাপুরে সাপ তো ধরবেই, কিন্তু নিজের জান বাঁচাবার ফিকিরও যেন সে করে। গাস্তে আমাকে যেতে হবে, আমি যদি বলি ‘না, ধনী লোকের কাছে আমি গাস্তে যাব না’ – এমনটাও হয় না। জামাআতের আমীর বলেছে – আমাকে যেতে হবে। তার বাড়িতে আমি ঢুকব, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করি। যদি আমি সতর্ক থাকি, চেষ্টা-ফিকির করতে থাকি, ইন’শা’আল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আমাকে হেফাজত করবেন।

কয়েকটা জিনিস। এক হল আল্লাহর পথে যাওয়ার পরে আমার সম্পদের মোহ যেন না বাড়ে, চাকরি-বাকরি যারা করছে, আরো উপরের পদে যাওয়ার মোহ যেন না বাড়ে। এত জোর দিয়ে এজন্য বলছি, চোখের সামনে প্রচুর দৃষ্টান্ত আছে যেগুলো তবলীগে না গেলে এত দুনিয়াদার হত না, তবলীগে যাওয়ার কারণে যত দুনিয়াদার হয়েছে। আর তার বড় মোহ। এখন দুআ করে, চেষ্টা তো আছেই, তার সাথে দুআ, বড় বাড়ি থাকা দরকার, বাড়ির আবার দুটো entrance স্বতন্ত্র গেট থাকা দরকার, দামি গাড়ি থাকা দরকার। যে গাড়ির বাইরে থেকে ভিতরে দেখা যায় না, ভিতর থেকে বাইরে দেখা যায়। জান্নাতে যেরকম আছে [মজমা হেসে ফেলল]। আর এগুলোর জন্য সে নানান চেষ্টাও করে, দুআও করে। আবার আল্লাহকে বুঝায় ‘এগুলো আমি যে করছি শুধু তোমার জন্য করছি, আমার নিজের কোন স্বার্থ নাই, মাস্তুরাতের জামাআত আনতে হবে, দেশ-বিদেশের জামাআত। যদি এরকম উপযুক্ত বাড়ি না থাকে তাহলে মাস্তুরাতকে রাখব কোথায়? সেজন্য বড় বাড়ির দরকার, বড় গাড়ির দরকার ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার আল্লাহকে বারবার করে বলে যে তুমি আসলে ব্যাপারটা ভাল করে বুঝতে পারছ না বোধহয়, আমার নফসের কোন দাবী এখানে নাই। [মজমার হাসি] একেবারে পিউরলি তোমার খাতিরেই করছি এগুলো। তো ওর সন্দেহ রয়ে যায় যে আল্লাহ ঠিকমত বুঝতে পারল কিনা, সেজন্য বারবার করে বুঝায় যেন সব আসলে আল্লাহর ওয়াস্তে। শয়তানও তাকে ধোকা দিয়েছে, আর সেও মনে করে আল্লাহর ওয়াস্তে, অথচ এই তাবলীগ ইত্যাদির সাথে জড়িত হওয়ার আগে তার মোটামাটি হলেই চলে যেত। আর এখন গাস্তের জন্যও তার গাড়ি দরকার।

তো ভাই আল্লাহ তাআলা দ্বীন দিয়েছেন, আল্লাহওয়ালাদের জীবনের দিকে যেন আমাদের নজর থাকে। ফাযায়েলে সাদাকাতের খুব বেশি যেন চর্চা করি। ফাযায়েলে সাদাকাত ও ফাযায়েলে আমল দুটোই আমাদের তবলীগের নিসাবের মধ্যে, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ফাযায়েলে সাদাকাতের চর্চা কম। কম পড়া হয়, অথচ ঐটা পড়ার প্রয়োজন খুব বেশি। এমনকি কিছু কিছু এমন কথাও শুনেছি, পুরনো তবলীগী সমালোচনা করছে শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়্যা রহঃ এর। ‘উনি এই ফালতু! কিতাব কেন লিখলেন? এই জাতীয় কথা যে আসলে এটা কাজের সাথে সামঞ্জস্য নয়, এটাতো দরবেশ বানায়। এমন কথা থাকা উচিত যেগুলো মানুষকে ফিকিরমন্দ বানাবে’। কি যে ফিকির, কি যে দরবেশ কিছুই বুঝা যায় না।

অথচ আমাদের মেজাজের মধ্যে যদি দুনিয়ার আগ্রহ না কমে তবে দ্বীন বুঝতে পারব না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) এর ছোট্ট উক্তি, বলছেন তাবেয়ীদেরকে “তোমরা সাহাবাদের চেয়ে ইবাদত বন্দেগী বেশি কর, কিন্তু সাহাবারা তোমাদের চেয়ে বেশি ভাল”। কথাটা কি? কথা একটাই ‘তারা দুনিয়ার ব্যাপারে বেশি যাহিদ ছিলেন আর আখিরাতের ব্যাপারে বেশি রাগিব ছিলেন’। আর তবলীগে আসার পরে মানুষের সাথে উঠাবসার কারণে অজান্তেই আমাদের সামাজিক উপরে অবস্থানের মোহ হয়ে যায়। আর একজন গরীব মানুষ গরীবের সাথে থাকত, সে কোন বাড়িতে ঢুকতও না, ঢুকতে পারতও না, তাকে বসাতও না। (কিন্তু) এখন ঢুকতে পারে, বসতে পারে আর তার শখ এরকম আমারও থাকুক। আগে এগুলি তার চোখের সামনে ছিলই না।

গল্প আছে – মেওয়াতী নাকি এসেছে দিল্লীতে, লালকেল্লা দেখেছে, শাহজাহানের রাজবাড়িতে যেটা, ঐটা বিরাট এরিয়া – চারপাশ ঘুরে দেখতে অর্ধেক দিন হয়ত লাগবে প্রায়, বাইরে বাইরে থেকে দেখেছে। সম্পূর্ণ দেখার পরে আন্দাজ তো করতে পারল যে বানিয়েছে কত বড়লোক হবে। তারপর সে বলল, ‘যে এই বাড়ি বানিয়েছে ও বোধহয় রোজ গুড় দিয়ে রুটি খায়’।[মজমার  হাসি]

তার জন্যে নিজেকে সামলিয়ে রাখা সহজ, কারণ বড়লোকই তার চোখের সামনে নেই। কিন্তু যার সামনে বিলাসিতার নানান সুরত, তার চোখের সামনে আছে, তার জন্যে নিজেকে সামলে রাখা একটু বেশীই শক্তি লাগবে। দূরে দেখলাম, বড়লোকরা কি করে জানিই না, বা তাদের ধারে কাছেই যাইনা, রাজা-বাদশাদের কাছে গেলে না বুঝব ক্ষমতার মোহ কি জিনিস। রাজাদের ইতিহাসে প্রচুর পাওয়া যায় – ভাইকে মেরে ফেলা এটা তো ডালভাত, নিয়মই। মোঘল রাজবংশের নিয়মই ছিল এটা যে ভাইদের মধ্যে একজন থাকবে আর বাকি সবাইকে মেরে ফেলবে। বড় হলে পরে একজন থাকবে, বাকি ভাইদেরকে মেরে ফেলবে। এটাই নিয়ম। লিখিত নয়, কিন্তু এটা মাও জানে, বাপও জানে যে এরা কয়েকজন বড় হবে, তারপর এদের মধ্যে যুদ্ধ হবে। একজন দিল্লীর সম্রাট হবে আর বাকিদেরকে মেরে ফেলবে।

বাপ তার ছেলেকে মেরে ফেলে। তৈমুর লং ওর সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন যে ছেলে, বুদ্ধিশুদ্ধির দিক থেকে, ও যখন একটু বড় হয়ে উঠেছে, বাপের ভয় লেগেছে যে এই ছেলে না আমার সিংহাসন নিয়ে নেয়। তো বাপের আদেশে তার চোখ তুলে ফেলা হয়েছে। বাপ তো দূরে, একথা শুনতেই কেমন লাগে যে একজন মানুষ জীবিত আর তার চোখ তুলে ফেলা হল। চিনিনা, জানিওনা, শুধু পত্রিকায় যদি কথাটা বের হয়, তাও কত পাঠক পড়ে পেরেশান হয়ে যায়। আর বাপ তার ছেলের ব্যাপারে আদেশ  দিচ্ছে তার চোখ তুলে ফেলার জন্য।

দুনিয়ার মোহ কত প্রবল যে হতে পারে এটা সাধারণ মানুষের জন্য আন্দাজ করা মুশকিল। ওর কাছে যদি কেউ উঠাবসা করে, তার আছর তো পড়বেই। এজন্য ভাই, দুনিয়া থেকে তো সরে থাকতে পারব না, কিন্তু আত্মরক্ষার হামেশা চেষ্টা করা। এজন্য যদি আমি কখনো দুনিয়ার পরিবেশে যাই, ফিরে এসে আবার তার উপযুক্ত মেহনত করবার চেষ্টা করি যাতে নিজেকে সাফ করতে পারি। মাওলানা ইলিয়াস রহঃ মেওয়াত যেতেন, মেওয়াত থেকে ফিরে আসার পরে রায়পুরে গিয়ে ইতেকাফ করতেন, সাহারাণপুরে গিয়ে ইতেকাফ করতেন। মেওয়াতের যে দুনিয়াদারির আছর পড়ে গেছে বোধহয় এজন্য ই্তেকাফ করে ঐটাকে পরিস্কার করতেন। তো মেওয়াত গিয়ে ফিরে এসে যদি ইতেকাফ করে নিজেকে পরিস্কার করতে হয়…

আমরা যদি মেওয়াতে গিয়ে একচিল্লা কাটাতে পারি, (মনে মনে ভাবি) সারাজীবনের ময়লা চলে যাবে। আর উনি মেওয়াতের ময়লা দূর করার জন্যে ইতিক্বাফ করছেন। দুনিয়া থেকে তো পালিয়ে যেতে পারব না, দুনিয়ার পরিবেশের ভিতরেই আছি, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করা দরকার আর বুঝা দরকার যে তবলীগ কি? নাম লেগে গেলেই তবলীগ হয় না। টাকা পয়সা, লেনদেন এটা তবলীগ নয়, সন্ত্রাস ঐটাও তবলীগ নয়।

সহজেই বুঝতে পারবে ঐ ব্যাক্তি যার সামনে মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর এই কথাটা আছে যে দ্বীনের কাজ ‘জোর’ এও হয় না, ‘জর’ এও হয়না, এটা তো ‘জারি’তে হয়। আর করেছেন হামেশা। পায়ে পড়া, চোখের পানি ফেলা। মাওলানা ইলিয়াস রহঃ কে থাপ্পর মেরেছে আর উনি তার পায়ে পড়েছেন। ধাক্কা দিয়েছে – পায়ে পড়েছেন। আর তবলীগের কাজ এভাবেই হত।

আব্দুল হামিদ সাহেব ছিলেন একজন। মোহামেডান স্পোর্টিং এর নামকরা ফুটবলার ছিলেন, ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এটা ছিল বৃটিশ জমানা, তখন একজন ইঞ্জিনিয়ার সাংঘাতিক ব্যাপার । বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, সাংঘাতিক কথা; যে জমানায় মেট্রিক পাশ করা লোকে দেখতে আসত। [মজমা হেসে ফেলল] উনি ছিলেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, তারপর আবার মোহামেডান এর সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড। দুই লাইনেই একেবারে টপে। তো আকাশের চেয়েও উপরে উড়েন। উনি কোথাও যাচ্ছিলেন। প্লাটফর্মে একটা তবলীগী জামাআত যাচ্ছে। ঐ তবলীগী জামাআত যাওয়ার সময় ভীরের মধ্যে ট্রেনে উঠতে গিয়ে তবলীগওয়ালার গাট্টি উনার গায়ে লেগেছে। উনি দিয়েছেন চড়। যার গাট্টি লেগেছে সেই তবলীগওয়ালা মোটামাটি বয়স্ক, চড় খেয়ে উনার কাছে মাফ চেয়েছে, ‘আমাকে মাফ করে দিন, আমি আপনাকে দেখতে পাইনি, বুঝতে পারিনি, আর বারবার মাফ চাচ্ছেন’। মাফ যে চাচ্ছেন কোন নকল মাফ চাচ্ছেন না। মাফ চাওয়ার বিষয় হল আপনার মত ব্যাক্তির মর্যাদা আমি রক্ষা করতে পারিনি – এটা আমার অপরাধ আর একেবারে দ্বীল দিয়ে মাফ চাচ্ছেন। আব্দুল হামিদ সাহেব যদিও চড় মেরে দিয়েছেন, কিন্তু ভিতরে একজন শরীফ লোক ছিলেন। ওর মাফ চাওয়াতে উনি একেবারে গলে গেছেন। উনার টিকিট ছিল ফার্স্ট ক্লাসে, কিন্তু থার্ড ক্লাসে গিয়ে ঐ তবলীগওয়ালার পাশে গিয়ে বসেছেন। সেও সুযোগ মত পেয়ে তশকীল করে ফেলেছে। বাকি জীবন তবলীগ-ই করেছেন।

তো ঐ এক চড়ের বদলে তার মাফ চাওয়া উনার সম্পূর্ন জীবন নিয়ে নিয়েছে। আর দ্বীনের কাজ এভাবেই হয়। অমুককে পিটিয়ে, মাথা ফাটিয়ে, তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে তবলীগী বানিয়ে দিব – এটাতো পার্টি হয়, সন্ত্রাস হয় অনেক কিছু হয়, কিন্তু দ্বীন হয় না…

কিন্তু বেশুমার মানুষ ধোকায় পড়ে গেছে, একজন দুজন নয়, লাখো মানুষ বলছে এটাই তবলীগ। কেন করছে? আসল তবলীগের রূপ তার সামনে দেখানো হয়নি, দেখানো দরকার। কিছু লোকও যদি তার আসল জিনিস দেখাতে পারে, হাজারো নকল কেটে যাবে। একটা ভাল স্যাম্পল দেখাতে পারলে হাজারো নকল কেটে যাবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক নসীব করুন – আমরা যেন সেই ভাল স্যাম্পল হতে পারি, অন্যদেরকেও ভাল স্যাম্পল দেখাতে পারি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক নসীব করুন।

سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهَ

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْك

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُون وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينََ

(মাজালিসে মুশফিক আহমেদ রহঃ  ২৩-০৩-২০১৫)

অডিও ডাউনলোড লিংক

https://www.dropbox.com/s/r2tc5oh9w0whqdq/23-03-15%20%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%B2%20%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%97%2C%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%20%E0%A6%87%E0%A6%B6%E0%A6%BE%20%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%20%E0%A5%A4.wav?dl=0